খরচ কমিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে এয়ার ইন্ডিয়াকে সস্তার বিমান সংস্থার দেখানো পথেই হাঁটার পরামর্শ দিল ঢোলাকিয়া কমিটি। যার মধ্যে আছে স্বেচ্ছাবসর, বিমানে খাবার বিক্রি, এমনকী প্রয়োজনে কর্মী ছাঁটাইয়ের সুপারিশও।
দীর্ঘ দিন ধরেই পাহাড় প্রমাণ ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহণ সংস্থাটির। কঠিন হচ্ছে লাভের মুখ দেখা। এই পরিস্থিতিতে ৪৬টি সুপারিশ বৃহস্পতিবার বিমান মন্ত্রী অজিত সিংহের কাছে জমা দিয়েছে আইআইএম আমদাবাদের অধ্যাপক রবীন্দ্র ঢোলাকিয়ার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি। এয়ার ইন্ডিয়াকে বাঁচানোর পথ খুঁজতে গত জানুয়ারিতে যা তৈরি করেছিল বিমান মন্ত্রক। কমিটির দাবি, সব পরামর্শ মানলে বছরে ৩,২০০ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে এয়ার ইন্ডিয়া। তবে তা সত্যিই কতটা মানা হবে, শুক্রবার সেটা জানার চেষ্টা করেও অজিত সিংহ বা বিমান সচিব কাশীনাথ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মী সংখ্যা ২৬ হাজার। কমিটির মতে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। তাই কর্মী কমানোর দিকে নজর দিতে হবে সংস্থাকে। সে জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের হাত ধরা যেতে পারে। প্রয়োজনে করতে হতে পারে কর্মী ছাঁটাইও। যেমন, কুয়ালালামপুর, দোহা, টোকিও-র মতো প্রায় ১৮টি শহরে এখন তাদের উড়ান যায় না। অথচ সেখানে সংস্থার নিজস্ব অফিস ও কর্মী রয়েছে। অবিলম্বে সেই অফিসগুলি বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।
খরচ কমাতে জোর দেওয়া হয়েছে উড়ানে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়া বন্ধ করার উপর। তা ছাড়া, মূলধন সংগ্রহের জন্য বাজারে ১০ হাজার কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ছাড়তে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে বলেছে কমিটি। পরামর্শ দিয়েছে অলাভজনক রুট থেকে উড়ান তুলে নিয়ে বছরে ৬০০ কোটি টাকা বাঁচানোর। তাদের মতে, জ্বালানি সাশ্রয় করেও বছরে ৪০০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। সেই সঙ্গে টিকিট কাটার জন্য এজেন্টদের যে ১% কমিশন দেওয়া হয়, তা-ও তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিটির দাবি, বিশ্বে কোথাও এই প্রথা চালু নেই।
আন্তর্জাতিক উড়ানকে আরও লাভজনক করতে কমিটির পরামর্শ, বিদেশে গেলে বিমানবন্দরের কাছেই সস্তার কোনও হোটেলে রাখা হোক পাইলট ও বিমানসেবিকাদের। যাতে থাকা ও যাতায়াতের খরচ বাঁচে।
খরচ কমানোর পাশাপাশি আয় বাড়ানোরও উপায় বাতলেছে কমিটি। যার মধ্যে রয়েছে যাত্রী পছন্দসই আসন বাছলে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, বাড়তি মাল বহনের জন্য জরিমানার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে বিমানে খাবার বিক্রিরও সুপারিশ করেছে তারা।
এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত উড়ানেই যাত্রীদের বিনা পয়সায় কয়েক পদ রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। কমিটির মতে, যাত্রী পিছু তার খরচ প্রায় ১৭৫ টাকা। তাদের পরামর্শ, অবিলম্বে এই খাবার দেওয়া বন্ধ করে বিনা পয়সায় শুধু চা, কফি, ঠাণ্ডা পানীয়, বাদাম, বিস্কুট জাতীয় খাবার দেওয়া উচিত। তাতে খরচ পড়বে যাত্রী পিছু ২৫ টাকা। এর পর স্যান্ডউইচের মতো খাবার বিমানে বিক্রি করা যেতে পারে। ঠিক যেমনটা করে স্পাইসজেট বা ইন্ডিগোর মতো সস্তার বিমান সংস্থা।
এয়ার ইন্ডিয়ায় বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার চল রয়েছে। সস্তার উড়ানগুলি কিন্তু তা দেয় না। অথচ সেই সমস্ত বিমান সংস্থার সঙ্গে ভাড়ার প্রতিযোগিতায় নেমে অনেক ক্ষেত্রেই টিকিটের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। তার উপর লাফিয়ে বাড়ছে বিমান জ্বালানির দাম। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে রয়েছে অলাভজনক রুটে উড়ান চালানোর বাধ্যবাধকতাও। ফলে এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে মুনাফার মুখ দেখা ক্রমশ কঠিন হয়ে গিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষে। সুপারিশ মেনে এ বার সেই চাকা ঘুরবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়ই। |