‘বিনম্র হতে দাও’, বন্দির পায়ের কাছে স্বয়ং পোপ
সারি দিয়ে বসে রয়েছে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা। কারও গায়ের রং কালো, কেউ বা সাদা। কারও আবার পায়ের পাতায় উল্কি।
পোপ ফ্রান্সিস হঠাৎই বসে পড়লেন তাদের পায়ের কাছে। রুপোর পাত্রে জল নিয়ে ধুয়ে দিলেন পা। তার পর কাপড় দিয়ে সযত্নে মুছে দিলেন। খানিক নিচু হয়ে চুমু খেলেন পায়ের পাতায়। হতবাক সবাই। হোলি থার্সডে-র অনুষ্ঠানে এ কী করলেন পোপ! একে তো জেল, তার উপরে দু’টি মেয়েরও পা ধুয়ে দিলেন ফ্রান্সিস! নিয়মের বেড়া ভেঙে ভ্যাটিকানে হচ্ছেটা কী? আগে কোনও পোপ তো কোনও মহিলার পা ধুয়ে দেননি!
কিন্তু ৭৬ বছরের আর্জেন্তিনীয় যে নিয়মভাঙা এমন সব কাণ্ডই বারবার ঘটিয়ে এসেছেন! ১২ বছর আগে দেশের প্রধান ধর্মযাজক থাকাকালীন সটান চলে যান এক হাসপাতালে। পা ধুয়ে দেন এড্স রোগীদের। তা ছাড়া, পুরনো একটা ছবিতে দেখা গিয়েছে সন্তান কোলে বসে রয়েছেন মা। আর তাঁর পায়ের কাছে কার্ডিনাল হোর্গে মারিও বোর্গেগলিও, অর্থাৎ আজকের পোপ ফ্রান্সিস। ধুয়ে দিচ্ছেন মায়ের পা।
বিনত পোপ। রোমের সংশোধনাগার কাসেল ডেল মার্মোয়। ছবি: এপি
তাই ফ্রান্সিসের কাছে গত কালের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভ্যাটিকানের ইতিহাসে তো অবশ্যই চমক। এত দিন ‘হোলি থার্সডে’-তে পোপেরা যাজকদের পা ধুয়ে দিতেন। যিশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে তাঁর বারো শিষ্যের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনাকেই স্মরণ করে পবিত্র বৃহস্পতিবার। কিন্তু এত দিন বলা হত, এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অধিকার শুধু পুরুষদেরই। কারণ, যিশুর বারো জন শিষ্যই পুরুষ ছিলেন। যদিও আচার-অনুষ্ঠানে মহিলাদের অধিকার নিয়ে এর আগে অনেক বিশপই সরব হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮৮-তে ভ্যাটিকানের তরফেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘হোলি থার্সডে’-র অনুষ্ঠানে শুধু ছেলেদেরই অধিকার।
সেই নির্দেশিকাই গুঁড়িয়ে দিলেন নতুন পোপ। তাঁর এ কাজ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ভ্যাটিকানের অন্যতম শীর্ষ উপদেষ্টা এডওয়ার্ড পিটার্সের কথায়, “নিজেই নিজের নিয়ম ভেঙে দিলেন ফ্রান্সিস। অবশ্যই দৃষ্টান্ত গড়েছেন। এ বিষয়ে তো কোনও পবিত্র নির্দেশ ছিল না। তবে একটা ভয়ও হচ্ছে, প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে ওঁকে।”
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ফেডেরিকো ল্যামবোর্দি এ প্রসঙ্গে জানান, কোনও ধরনের বিতর্ক তৈরি করতে চাননি পোপ। তবে, যিশুর ইতিহাসটাও অস্বীকার করেননি তিনি। ই-মেলে ল্যামবোর্দি বলেছেন, “আমাদের এই ছোট গোষ্ঠী, তার আচার-অনুষ্ঠান এ সবে তো মেয়েরাও রয়েছে। আমরাই বলি, সকলকে ভালবাসো। তবে মেয়েরা কেন বঞ্চিত থাকবে?”
তবে বিতর্ক যতই হোক, মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে পোপ যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ২০১১ সালে নিজের লেখা বই ‘অন হেভেন অ্যান্ড আর্থ’-এ তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন, মেয়েদের যাজক হওয়ার যোগ্যতা নেই, তার একটাই কারণ “যিশু এক জন পুরুষ ছিলেন।”
পোপের কর্মকাণ্ড দেখে সবাই হতবাক, তিনি কিন্তু নিরুত্তাপ। একে একে তরুণ বন্দিদের কাছে এগিয়ে গেলেন। আলাদা করে কথা বললেন প্রত্যেকের সঙ্গে। বললেন, “আশা ছেড়ো না। নিজের উপর ভরসা থাকলে জীবনে ঠিক এগিয়ে যেতে পারবে।”
হঠাৎই একটা প্রশ্ন ছিটকে এল ফ্রান্সিসের দিকে “কেন এসেছেন এখানে?” ফ্রান্সিস বললেন, “আমাকে বিনম্র হতে সাহায্য করো। এক জন বিশপের তেমনই তো হওয়া উচিত। যা মন থেকে করতে ইচ্ছে হল, তা-ই করলাম। ইচ্ছের তো কোনও ব্যাখ্যা হয় না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.