|
|
|
|
ক্ষমাভিক্ষা নয়, জেলেই যাব আমি |
সংবাদসংস্থা • মুম্বই |
ক্ষণিকের জন্য মাথা তুললেন, আবার নামিয়ে নিলেন। ভাঙনের স্পষ্ট ছাপ চোখেমুখে নিয়ে আজ প্রকাশ্যে এলেন সঞ্জয় দত্ত।
গত কয়েক দিন ধরেই তোলপাড় চলছে মুন্নাভাইকে নিয়ে। রাজনীতিক থেকে অভিনেতা, অনেকেই দাবি তুলেছেন ঢের হয়েছে, এ বার সঞ্জয়কে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। আবার শিবসেনার মতো কোনও কোনও পক্ষের বক্তব্য, প্রাপ্য শাস্তি পেতেই হবে তাঁকে। বিতর্ক যখন
তুঙ্গে, আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন সঞ্জয়। জানালেন, ক্ষমাভিক্ষা তিনি করবেন না। সর্বোচ্চ আদালত যে সময়সীমা দিয়েছে, তার মধ্যেই আত্মসমর্পণ করবেন।
১৯৯৩-এ মুম্বই বিস্ফোরণের সময় সন্ত্রাসবাদীদের দেওয়া অস্ত্র বেআইনি ভাবে বাড়িতে মজুত রাখার অপরাধে গত ২১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট সাজা বহাল রাখে সঞ্জয়ের। সাজা এক বছর কমিয়ে, তাঁকে দেওয়া হয় ৫ বছরের কারাদণ্ড। সে দিন প্রকাশ্যে আসেননি সঞ্জয়। মুম্বইয়ের ইম্পিরিয়াল বিল্ডিংয়ের দশতলার ফ্ল্যাটে বন্দি করে রেখেছিলেন নিজেকে। অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিক ও ভক্তদের কাছে একটা বিবৃতি পাঠান অনেক পরে “এই মুহূর্তে নীচে এসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারলাম না। আমি দুঃখিত।”
কিন্তু গত এক সপ্তাহে জল গড়িয়েছে বহু দূর। মুন্নাভাইকে যাতে আর জেলে যেতে না হয়, তার জন্য জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দিগ্বিজয় সিংহ কিংবা রাজ ঠাকরে, তেমনই রয়েছেন জয়া বচ্চন থেকে শত্রুঘ্ন সিন্হা। রজনীকান্ত, অজয় দেবগণ, কর্ণ জোহরের মতো অনেকেও জানিয়েছিলেন, সঞ্জয়ের সাজায় তাঁরা বিচলিত। এর পরেও কিন্তু সঞ্জয়কে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। |
|
সাংবাদিক বৈঠক শেষে সঞ্জয়ের কান্না। সান্ত্বনা দিচ্ছেন বোন
প্রিয়া। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের বাড়ির বাইরে। ছবি: রয়টার্স |
ছ’দিনের আড়ালটা ভাঙার জন্যই যেন প্রস্তুত করছিলেন নিজেকে। অবশেষে আজ বান্দ্রার বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তিনি। ওই কয়েক মিনিট আলাদা হয়ে রইল তাঁর আর পাঁচটা সাংবাদিক বৈঠকের চেয়ে।
ভীষণ ভীষণ কঠিন ওই কয়েকটা মুহূর্তে আগাগোড়া পাশে রইলেন বোন প্রিয়া। ধরা গলায় বলতে শুরু করলেন সঞ্জয় “সংবাদমাধ্যমকে, দেশের মানুষকে হাত জোড় করে বলছি, ক্ষমাভিক্ষার আর্জি আমি জানাব না। ক্ষমার যোগ্য আরও অনেকে রয়েছেন। সুতরাং বিতর্কের অবকাশ নেই। সুপ্রিম কোর্ট যে সময় দিয়েছে, তার মধ্যেই আত্মসমর্পণ করব।” মুন্নাভাইয়ের চোখ উপচে জল এল। পাশ থেকে দাদার পিঠে হাত রাখলেন প্রিয়া।
চোখ মুছলেন সঞ্জয়। ফের বলতে লাগলেন, “আমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত। একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যমকে হাত জোড় করে বলছি, যত দিন না জেলে ঢুকছি, আমায় শান্তিতে থাকতে দিন।”
হাতে আর তিন সপ্তাহ। এর মধ্যেই ধরা দিতে হবে সঞ্জয়কে। আগেই ১৮ মাস জেলে ছিলেন বলে আর সাড়ে তিন বছর জেলে থাকতে হবে তাঁকে। চোখ মুছতে মুছতেই বললেন, “খুব... খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যাঁরা আমার পাশে, আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ। সংবাদমাধ্যমের সবাইকে জানাচ্ছি, হাতে আর মাত্র ক’টা দিন রয়েছে। এর মধ্যে আমায় সব কাজ শেষ করতে হবে।”
তাই সাংবাদিক বৈঠক সেরেই সঞ্জয় বেরিয়ে গেলেন শ্যুটিংয়ে। আপাতত ‘পুলিশগিরি’ ছবির কাজ
শেষ করছেন। নতুন ‘জঞ্জির’-এ শের খানের ভূমিকায় তিনি। সে ছবির ডাবিং বাকি রয়েছে। সেটা শেষ করবেন। কর্ণ জোহরের ‘উংলি’ এবং রাজকুমার হিরানির ‘পিকে’ ছবির কাজও এগিয়ে রাখবেন কিছুটা। এত কিছুর মধ্যে “পরিবারের সঙ্গেও তো সময় কাটাতে হবে”, বললেন তিনি।
কথা শেষ হতে না হতেই একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সঞ্জয়। জড়িয়ে ধরলেন বোনকে। তত ক্ষণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের তির ছুটে আসতে শুরু করেছে। ভিড়ের মধ্যে শোনা গেল একটা ভারী গলা, “কেউ প্রশ্ন করবেন না।” প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়লেন মুন্নাভাই। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। সঞ্জয় নিজে ক্ষমার আবেদন জানাবেন না। কিন্তু তাঁর হয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমাভিক্ষার আর্জি জানিয়েছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু। বলেন, “সঞ্জয় নিজে আর্জি না জানালেও ক্ষতি নেই। সংবিধান রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করার অধিকার দিয়েছে। ক্ষমা ভিক্ষার আর্জি আসামিকেই করতে হবে এ কথা সংবিধানে বলা নেই।”
|
পুরনো খবর: ভিতরে ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছি |
|
|
|
|
|