তছরুপের একটি মামলায় তারা দু’জনেই ছিল জেল-হাজতে। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হল পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকা তছরুপের মামলাতেও। পুলিশ জানায়, ওই দু’জনের নাম মণীশ দত্ত ও সেন্টু দত্ত। আদালতের নির্দেশে দু’জনকেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকা গায়েবের মামলায় এ-পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ইউকো ব্যাঙ্কের সার্কাস অ্যাভিনিউ শাখার ম্যানেজার অ্যালয়েস লাকড়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৪ মার্চ। মণীশ ও সেন্টু দত্তকে সোমবার গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। জানুয়ারিতে রাজ্য বিপণন পর্ষদে ১৭ কোটি টাকা তছরুপের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সেই মামলায় অভিযুক্ত মণীশ ও সেন্টু জেলে ছিল। গোয়েন্দারা জানান, যারা বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকা তছরুপ করেছে, সেই চক্রের সঙ্গে ওই দু’জনও জড়িত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। জেল থেকে পুলিশি হেফাজতে এনে জেরা করার পরে মণীশ ও সেন্টুর কাছ থেকে এই ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
নতুন কী তথ্য মিলল?
ঝেড়ে কাশছে না পুলিশ। তবে তারা এটুকু জানাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকা, রাজ্য বিপণন পর্ষদের ১৭ কোটি টাকা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ কোটি টাকা তছরুপের সঙ্গে একটি দুষ্টচক্রই যুক্ত। চক্রটি কী ভাবে কাজ করত, ধৃতদের জেরা করে তারও কিছুটা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা বলছেন, কোন কোন সরকারি সংস্থা ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতে টাকা রাখতে চাইছে, চক্রটি প্রথমে সেই তথ্য সংগ্রহ করত। তার পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা ‘দরপত্র’ দিত। সেই দরপত্রে সরকারি সংস্থাটিকে বেশি হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। দরপত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তারা ব্যাঙ্কের ভুয়ো কাগজপত্রও পেশ করত। ব্যাঙ্কে ভুয়ো নামে অ্যাকাউন্ট খুলত তারা।
তদন্তকারীরা জানান, দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পরে যে-সরকারি সংস্থাটিকে শিকার বানানো হয়েছে, ব্যাঙ্কে ভুয়ো নামের অ্যাকাউন্টে তাদের টাকা স্থানান্তর করতে বলত চক্রের লোকজন। টাকা স্থানান্তরিত হওয়ার পরে তারা সরকারি সংস্থাটিকে স্থায়ী আমানতের জাল সার্টিফিকেট বা শংসাপত্রও দিত। পরে তারা তাদের ভুয়ো অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকা সুযোগমতো তুলে নিয়ে চম্পট দিত।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই চক্রের লোকজন ব্যাঙ্কের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারের সাহায্যেই ‘অপারেশন’ চালাত। মোটা টাকা দেওয়া হত ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। পুলিশের তথ্য বলছে, বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকা তছরুপের ঘটনায় ইউকো ব্যাঙ্কের সার্কাস অ্যাভিনিউ শাখার ম্যানেজার লাকড়াকে কমিশন বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা দিয়েছিল ওই চক্র। সেই টাকা উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।
|