ভারতের আকাশে ডানা মেলে ওড়ার পথ অনেকটাই পরিষ্কার হল টাটা-এয়ার এশিয়া যৌথ উদ্যোগের। মঙ্গলবার বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদের (এফআইপিবি) ছাড়পত্র পেয়েছে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পরে আর তেমন কোনও বাধার সামনে পড়তে হবে না নতুন এই সংস্থাকে।
১৯৩২-এ ভারতে বিমান পরিবহণের সূত্রপাত জে আর ডি টাটার হাত ধরে। পরে যে সংস্থার নাম হয় এয়ার ইন্ডিয়া। টাটাদের হাত থেকে সংস্থার ভারও ক্রমে চলে যায় ভারত সরকারের কাছে। নতুন করে বিমান ব্যবসায় নামার স্বপ্ন দীর্ঘদিন ধরেই মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল টাটা গোষ্ঠী। কিন্তু স্পাইসজেট বিমানসংস্থার অংশীদারি ছাড়া সেই স্বপ্ন পূরণে বড় মাপের কোনও সফল্য এত দিন তারা পায়নি। সুযোগটা এনে দিল বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। মালয়েশীয় সংস্থা এয়ার এশিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ফের আকাশে উড়তে চলেছে টাটা।
তবে একটা সংশয় ছিল। সরকারি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ভারতের কোনও বিমানসংস্থায় লগ্নি করতে পারবে বিদেশি বিমানসংস্থা। কিন্তু, এখন তো টাটাদের হাতে কোনও বিমানসংস্থা নেই। তা হলে কী করে এই গাঁটছড়া মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু, মঙ্গলবার এফআইপিবি-র ছাড়পত্রের সঙ্গে সঙ্গে সংশয়ের আর কোনও অবকাশ রইল না বলেই মনে করছেন বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই গাঁটছড়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনও বাধা নেই বলেই এফআইপিবি সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই উদ্যোগে ৪৯% অংশীদারি থাকবে মালয়েশীয় সংস্থাটির হাতে। পরিচালনার বিষয়টিও হাতে রাখবে তারা। এয়ার এশিয়ার লগ্নির পরিমাণ হবে ১৬০ থেকে ২৭০ কোটি টাকা। ৩০% শেয়ার থাকবে টাটাদের হাতে। আর বাকি ২১ শতাংশের মালিক হবে অরুণ ভাটিয়ার হিন্দুস্তান এভিয়েশন। যাদের ব্যবসা বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরি।
নতুন এই বিমানসংস্থা চেন্নাই থেকে তাদের উড়ান পরিষেবা শুরু করবে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। গোড়ায় ৩-৪টি বিমান নিয়েই পরিষেবা শুরু করে দিতে চায় তারা। এয়ার এশিয়ার সিইও টনি ফার্নান্ডেজ জানান, সস্তার এই বিমানসংস্থায় প্রথমে কাজ পাবেন অন্তত ৩০০ জন।
নতুন এই সংস্থা নিয়ে আগ্রহের মূল কারণ অবশ্যই টাটা গোষ্ঠী। ১৯৩২ সালে এ দেশের প্রথম বিমান পরিবহণ সংস্থা টাটা এয়ারলাইন্স চালু করেন টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন চেয়ারম্যান জে আর ডি টাটা। ১৯৩৮ সালে সংস্থার নাম বদলে হয় টাটা এয়ার সার্ভিসেস। ১৯৪৬ সালে শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির সময় নাম ফের বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ১৯৪৮ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ৪৯% শেয়ার কিনে নেয় কেন্দ্র। ১৯৫৩ সালে জাতীয়করণ হয় এয়ার ইন্ডিয়ার।
শোনা যায়, এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ায় যথেষ্ট দুঃখ পেয়েছিলেন জে আর ডি। একই রকম আক্ষেপ ঝরে পড়েছিল রতন টাটার গলাতেও। তিনি বলেছিলেন, নব্বইয়ের দশকে ঘরোয়া বিমান পরিবহণ সংস্থা চালু করতে আগ্রহী ছিলেন। এ জন্য গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা ছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে। কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। |