ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আইনের ফাঁক বন্ধ করতে চায় শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। সে জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। মঙ্গলবার কলকাতায় এ কথা জানান সেবি চেয়ারম্যান ইউ কে সিংহ।
যে রকম আগ্রাসী ভাবে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি ব্যবসা করছে, তাতে সেবি উদ্বিগ্ন। তাই তাঁরা সেগুলির কর্মকাণ্ডে গণ্ডি টেনে আমজনতার স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগী হবেন বলে জানান সিংহ। তাঁর মতে, এ জন্য স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থাকা জরুরি। তাই এ দিন সিআইআইয়ের সভায় তাঁর আশ্বাস, কর্তৃপক্ষ তৈরি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। |
সিংহের অভিযোগ, “আইনের ফাঁক ব্যবহার করে ব্যবসা চালাচ্ছে সংস্থাগুলি। এদের অনেক ব্যবসাই সেবির নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তবে ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (সিআইএস)’-এর আওতায় কোনও সংস্থা বাজার থেকে টাকা তুললে তা সেবির নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য নিধি ফান্ড বা সমবায়ের মতো বেশ কিছু তহবিল সংগ্রহ প্রকল্পকে সিআইএসের এক্তিয়ার বহির্ভূত রাখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি ওই সব প্রকল্পের মাধ্যমেই মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তাই সিআইএস প্রকল্প সংশোধনেও সেবি উদ্যোগী হবে।”
সেবি চেয়ারম্যান জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এই সংস্থাগুলি ৩ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এজেন্টদের কমিশনও ১৫-২০% বা কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি। তাঁর কথায়, আইন মেনে ব্যবসা করে কোনও আর্থিক সংস্থার পক্ষে এই রিটার্ন দেওয়া অসম্ভব।
সংস্থাগুলিতে টাকা রাখার ঝুঁকি নিয়ে আমজনতাকে সচেতন করার পরিকল্পনাও করেছে সেবি। সিআইআইয়ের মতো বণিকসভার সঙ্গে এ জন্য যৌথ ভাবে প্রচার চালাতে চান তিনি।
শেয়ার বাজারের যে বেহাল দশা চলছে, তা নিয়েও এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন সেবি চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি, শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের প্রবণতা কমছে। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে বাজারে শেয়ার ছাড়া হয় ৬৭ হাজার কোটি টাকার। ২০১১-১২ সালে তা কমে হয় ১৬ হাজার কোটি। এই অর্থবর্ষের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড়া হয়েছে ১৪,৪০০ কোটির শেয়ার। গত তিন বছরে বহু সংস্থা শেয়ার ছাড়ার আবেদন করেও তুলে নেওয়ায় বাতিলই হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব।
সেবির নিয়ম অনুযায়ী, এখন নথিভুক্ত সংস্থার অন্তত ২৫% শেয়ার সাধারণ মানুষকে বিক্রি করতে হবে। সিংহের দাবি, অনেকেই তা মানছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সেবি। সংস্থার গোপন তথ্য ব্যবহার করে বেআইনি শেয়ার লেনদেন রুখতে আরও কড়া হচ্ছে তারা। কঠোর হচ্ছে সংস্থার নিজের শেয়ার নিজেরই কিনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও। |