চাপের মুখে লিয়াকত-কাণ্ডের ভার শেষ পর্যন্ত জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতেই তুলে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে। দু’দিন আগে এই মামলার দায়িত্ব এনআইএকে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তার পরে আজ এই সিদ্ধান্ত।
যদিও এ দিন আরও এক বার কাশ্মীরিদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রকে ফের আক্রমণ করেছেন ওমর। তাঁর অভিযোগ, বারে বারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কাশ্মীরকেই বেছে নেওয়া হয়। আফস্পা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে সেই সাহসটুকুও দেখাতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। আফজলের ফাঁসি রাজ্যে অশান্তি ডেকে আনবে, এ নিয়ে সাবধান করার পরও তাঁদের কথা শোনা হয়নি। এ বার লিয়াকত শাহকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হল। ওমরের প্রশ্ন, সত্যিই যদি লিয়াকত সন্ত্রাসের ছক কষত, তা হলে কি সে স্ত্রী-মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে আসত?
২০ মার্চ লিয়াকত আলি শাহ ধরা পড়ার পর দিল্লি পুলিশ দাবি করে, রাজধানীতে বড় নাশকতার ছক বানচাল করে দিতে পেরেছেন তাঁরা। এ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মত একেবারে উল্টো। তাদের বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদের পথ ছেড়ে আত্মসমর্পণ করতে দেশে ফিরছিলেন লিয়াকত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সেই খবর জানতেন। সব জানা সত্ত্বেও উপত্যকার পুলিশের হাতে তাকে তুলে না দিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় দিল্লি পুলিশ।
লিয়াকতের প্রথমা স্ত্রীও জানান, দু’বছর আগে স্বামীর ফেরার অনুমতি চেয়ে কুপওয়ারা পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। শাহ পাকিস্তান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী আখতার ও মেয়ে জাবিনাকে। আখতারও কাল দাবি করেন, ২০০৫ সাল নাগাদই সন্ত্রাসবাদের পথ ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। মুজফ্ফরাবাদের কাছে মাংসের একটি ছোট দোকান চালিয়ে দিন কাটত তাঁদের। জঙ্গি সংস্রব ছেড়ে দেশে ফিরতে চাইলে জম্মু-কাশ্মীর সরকার যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে, তার সুবিধা নিতেই দেশে ফিরেছেন তাঁরা। এমনকী সেনার গাড়িতেই নেপাল সীমান্ত থেকে দেশে ঢুকেছিলেন বলেও জানান আখতার।
লিয়াকতের পরিবারের দাবিকে সমর্থন করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সরকারও। দু’দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। লিয়াকতের তদন্ত যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে এনআইয়ের হাতে এই মামলার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আফজল গুরুর পর লিয়াকতকে নিয়ে উপত্যকার মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। এই পরিস্থিতিতে শেষমেশ ওমর আবদুল্লার দাবিই আজ মেনে নিলেন শিন্দে। তিনি জানান, লিয়াকতকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখবেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে এও জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য তাড়াতাড়িই এক সার্বিক নীতি তৈরি করা হবে। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা যাতে আবার না ঘটে, তাই এই সিদ্ধান্ত।
এনআইএকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দিনই লিয়াকত প্রশ্নে উত্তপ্ত হয়ে উঠল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা। শাসক দলেরই বিধায়ক নাসির ওয়ানি এ নিয়ে আজ মুলতুবি প্রস্তাব আনেন। স্পিকার মুবারক গুল অবশ্য তা খারিজ করে দিয়ে বলেন, আত্মসমর্পণ করতে আসা কেউ জেল খাটতে পারেন না।
বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আনতে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাই এ নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করা অর্থহীন। এ দিকে বিরোধী নেত্রী মেহবুবা মুফতি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চেয়ে বন্দি কাশ্মীরিদের উপর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
|