|
|
|
|
অর্থসাহায্য দিয়ে মমতা-নীতীশকে পাশে চায় কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ইউপিএ থেকে ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর নীতীশ কুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে খুশি করে চলতে চাইছে কেন্দ্র।
বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আর্থিক প্যাকেজের জন্য নীতীশ কুমার দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছেন। তেমনই ঋণগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে রাজ্যকে উদ্ধারের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি রয়েছে মমতারও। সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, জাতীয় রাজনীতিতে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে এই দুই আঞ্চলিক নেতার দাবিকে এখন সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে চাইছে মনমোহন সিংহ সরকার। তিন দিনের সফরের জন্য আজ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। সূত্রের খবর, সফরে যাওয়ার আগে বাংলা-বিহার আর্থিক প্যাকেজের প্রশ্নে উভয়ের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দুই রাজ্যকে কেন্দ্র কতটা সাহায্য করতে পারে তা খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদেরও নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন চিদম্বরম। এমনকী অর্থ মন্ত্রক সূত্রে এও বলা হচ্ছে, বাংলা-বিহারকে সাহায্যের ব্যাপারে শীঘ্র একটি রূপরেখা ঘোষণা করতে পারে অর্থ কমিশন। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলা-বিহার সম্পর্কে হঠাৎ কেন সহৃদয় হচ্ছেন মনমোহন-চিদম্বরম! কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এর মানে এই নয় যে কংগ্রেস আশা করছে এনডিএ ছেড়ে নীতীশ কুমার এখনই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবেন। বা মমতা এখনই ফের ইউপিএ জোটে ফিরে আসতে চাইবেন। বরং এই দুই আঞ্চলিক নেতা তাঁদের সুবিধা দেখেই ভবিষ্যৎ সমীকরণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু কংগ্রেস তথা কেন্দ্রের উদ্দেশ্য অন্য। ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর সংসদে সরকারের সংখ্যার ঘাটতি হচ্ছে। সমর্থক দল মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি সেই সুযোগ নিয়ে হম্বিতম্বি করছে। এই অবস্থায় সংসদ চালাতে এবং লোকপাল বিল, খাদ্য নিরাপত্তা বিল, জমি বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিল পাশ করানোর জন্য এই আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে পাশে পেতে চাইছে সরকার। আর সেই কারণেই প্রশাসনিক প্রশ্নে সমঝোতা করার বার্তা দিচ্ছে। |
|
যদিও অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, বাংলা ও বিহারকে অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ক্ষমতা সীমিত। সম্প্রতি এক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে তা জানিয়েছেন চিদম্বরম। চিদম্বরম বলেন, “আপনি তো বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। আপনার অন্তত বোঝা উচিত সরকার ধারাবাহিক। তাই আগের সরকারের ঋণ, নতুন সরকারের ঋণ বলে কিছু হয় না।” তাই রাতারাতি পশ্চিমবঙ্গের সব ঋণ মকুব করে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান চিদম্বরম। তবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করবে কেন্দ্র। তেমনই কেরল, পঞ্জাবের মতো ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির জন্য আর কী কী পদক্ষেপ করা যায় তা খতিয়ে দেখছে অর্থ কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকা চেয়ে আজই যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং অর্থসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। সূত্রের খবর, কমিশনের তরফে রাজ্যের প্রতিনিধি দলকে আজ ইতিবাচক সাড়াই দেওয়া হয়েছে। এও ইঙ্গিত করা হয়েছে ৩১ মার্চের মধ্যে ওই টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে।
আবার বিহারের দাবি সম্পর্কেও অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, কোনও একটি রাজ্যকে দুম করে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ায় অসুবিধা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যগুলিও একই দাবি তুলতে পারে। ঘরোয়া আলোচনায় চিদম্বরমও বলেছেন, পিছিয়ে পড়ার মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিরক্ষরতাই একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। সে রকম হলে সুইৎজারল্যান্ড তো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তবে চিদম্বরম নীতীশকে জানিয়েছেন, বিহারের উন্নয়ন কেন্দ্রও চায়। তাই বিশেষ মর্যাদা দিতে না পারলেও যে সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন তা যথাসম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। প্রসঙ্গত, মনমোহন সরকারের আমলেই পিছিয়ে পড়া এলাকার (বিআরজিএফ) উন্নয়নের জন্য ৮৭৫০ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, নীতীশের দাবির প্রেক্ষিতেই এই খাতেই এ বার আরও কিছু বরাদ্দ করতে পারে কেন্দ্র। |
|
|
|
|
|