সম্পাদক সমীপেষু...
ছবির কিছুই বোঝেন না, কেন?
মরুসমাজ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে (১৭-৩) সদ্যপ্রয়াত শিল্পী গণেশ পাইন ও তাঁর শিল্প সম্পর্কে ‘শিক্ষিত বাঙালি’র চমৎকার মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেমন, এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘‘যে শিল্প সহজিয়া নয়, যাহা মগজ দিয়া বুঝিতে হয়, ‘শিক্ষিত বাঙালি’ তাহার প্রতি উদাসীন”। ‘শিক্ষিত বাঙালি’ শব্দ দুটি তাৎপর্যপূর্ণ। তথাকথিত অশিক্ষিত, নিচুতলার মানুষদের চটুল সংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি স্বাভাবিক। যার প্রকাশ সহজে দেখা যায়, বোঝাও যায়। কিন্তু ‘শিক্ষিত বাঙালি’ সংস্কৃতির নামে যা গ্রহণ করেন তা বিচিত্র, অনেক ক্ষেত্রে হাঁসজারু মার্কা। বিশেষত চিত্রকলা ও ভাস্কর্য সম্পর্কে এঁদের উদাসীনতা সীমাহীন। স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকারদের মতো সাংস্কৃতিক জগতের মানুষরাও কেন জানি না এই শিল্পমাধ্যমটি সম্পর্কে হয় উদাসীন অথবা বিচিত্রকে শিল্প বলে গ্রহণ করেন। এমন বহু স্রষ্টার ড্রয়িং রুমে শিল্পের নামে যে ‘শিল্পকর্ম’টি শোভা পায়, তা থেকে চিত্রকলা-ভাস্কর্য সম্পর্কে আমাদের রুচির স্তর কোথায়, তা বোঝা যায়। গণেশ পাইনকে দেখেছি নিজে অত বড় মাপের শিল্পী হয়েও নাটক চলচ্চিত্র ও সংগীতানুষ্ঠানে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে দেখতে। এ সব ক্ষেত্রে তিনি ফ্রি পাস বা গেস্ট কার্ড নিতে অস্বীকার করতেন। একটি ঘটনা উল্লেখ্য। দু’ দশকেরও আগে পিটার ব্রুকের ‘মহাভারত’-এর চলচ্চিত্রায়ন নন্দনে মাত্র একটি শোতে দেখানো হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই টিকিটের হাহাকার ছিল। অনেকের মতো আমরা ক’জন বন্ধু টিকিটের জন্য নন্দন চত্বরে সারা রাত জেগেছিলাম। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের আমার এক জন শিক্ষক অনুরোধ করলেন, আমরা যেন গণেশ পাইনের জন্যও একটি টিকিট রাখি। যতটুকু শুনেছি, নন্দন কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে গেস্ট কার্ড পাঠালেও কেন জানি না, তিনি নিতে চাননি। আমাদের দেওয়া টিকিটেই দেখেছিলেন। একাডেমির নাট্যমঞ্চ, নন্দনে নিয়মিত তাঁর সঙ্গে দেখা হত। দুর্ভাগ্য, ওই মাপের তো নয়ই, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতারাও কদাচিৎ আর্ট গ্যালারিতে ছবি বা ভাস্কর্য দেখতে যান। অথচ সেখানে এক পয়সাও প্রবেশমূল্য লাগে না। একান্ত পরিচিত কোনও শিল্পী বন্ধুর প্রদর্শনীতে যাওয়ার কথা এখানে বলা হচ্ছে না। যেমন বলা হচ্ছে না ব্যতিক্রমীদের কথাও।
বহু বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, গায়ককে বলতে শুনেছি, ‘ছবির কিছুই আমি বুঝি না’। একটি শিল্পমাধ্যমের গভীর প্রকাশক হয়েও অন্য শিল্পমাধ্যমের গভীরতা, সম্পাদকের কথায়, ‘যাহা মগজ দিয়া বুঝিতে হয়’, মগজ-ধারক স্রষ্টারা কেন বুঝতে পারেন না, তা বড় আশ্চর্যের। অথচ না বোঝার জন্য এতটুকু লজ্জাবোধ তাঁদের চোখেমুখে প্রকাশ পায় না! সে জন্যই হয়তো শিল্পী গণেশ পাইনের অন্তিমযাত্রায় বা কেওড়াতলা শ্মশানেও তেমন শ্রেণির কাউকে চোখে পড়ল না। তবে ‘স্মরণসভায়’ এঁদের অনেককেই দেখা যাবে। অবশ্য শুধু তথাকথিত ‘শিক্ষিত বাঙালি’-দের দোষ দিলেই চলবে না। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকাও রয়েছে। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম থেকে পত্রপত্রিকায় সচিত্র সংবাদ পরিবেশিত হতে হতে অনেক তৃতীয় শ্রেণির অভিনেতা, গায়ক, সাহিত্যিকও আজ ‘সেলিব্রিটি’। এক জন চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পীও কি এ বঙ্গে ‘সেলিব্রিটি’ হতে পেরেছেন? তাই হয়তো প্রসঙ্গত গণেশ পাইন বলেছিলেন, ‘বাঙালি দ্বিতীয় শ্রেণির কবিকে মনে রাখে, প্রথম সারির শিল্পীকে নয়।’ আসলে জনগণের বিচারে যাঁরা জনপ্রিয়, সংবাদমাধ্যমও তাঁদেরই তুলে ধরতে চায়। চিরন্তন শিল্পীর সেখানে তেমন ঠাঁই নেই। তাঁকে স্মরণে রাখতে মগজ ও পরিশ্রম লাগে।


নিউ দিঘার পরিবেশ উন্নত করা জরুরি
সম্প্রতি ট্রেনে করে নিউ দিঘা ঘুরে এলাম। নতুন স্টেশনের সৌন্দর্যায়ন আমাকে চমৎকৃত করেছে, যদিও স্টেশনের বেশ কিছু কাজ এখনও চলছে। কিন্তু নিউ দিঘায় দেখলাম সারি সারি ঝাউগাছের পিছনে ছোট ছোট পরিসরে উনুন জ্বালিয়ে চলছে রান্নাবান্না। মোটামুটি পিকনিক টাইপ। সেই পিকনিকের যত কিছু আবর্জনা এ-দিক ও-দিক ছড়ানো। প্রায় বিনষ্ট হয়ে যাওয়া সেই ঝাউবনের এক প্রান্তে সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ভাবে নির্মিত হয়েছে অস্থায়ী শৌচালয়, অতি নিম্নমানের পরিবেশ সেখানে। নিউ দিঘার সমুদ্রসৈকতে যত্রতত্র প্লাস্টিক প্যাকেট, বিস্কুট-চিপসের র্যাপিং পেপার, দোমড়ানো জলের বোতল আরও কত কী আবর্জনা ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। এগুলো যদি নিয়ম করে বন্ধ করা যায়, আর অস্থায়ী শৌচালয়ের পরিবর্তে ‘স্থায়ী সুলভ কমপ্লেক্স শৌচালয়’ তৈরি করা হয় এবং রান্নাবান্নার ব্যবস্থা ওখানে যদি সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া যায়, তা হলে এই অঞ্চলের প্রকৃতি কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়।


তিনি অভিনেতাও
কলকাতার কড়চায় (৪-৩) ‘স্মরণ’ শীর্ষক রচনায় একটি সংযোজন। প্রয়াত ইন্দ্রাশিস লাহিড়ি শুধু নাট্যকার নন, ভাল অভিনেতাও ছিলেন।
বহুরূপীর ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে তাঁকে অভিনয় করতে দেখেছি। এ ছাড়া কুমার রায়ের নির্দেশনায় ‘রাজদর্শন’ (বহুরূপী) নাটকে তাঁর বীতশোক চরিত্রে অভিনয় নজর কাড়ে। পরে চেনামুখের বিভিন্ন প্রযোজনায় অভিনয় করেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.