কিছুতেই দৌরাত্ম্য থামছে না মাটি মাফিয়াদের। ভাগীরথী অজয় পাড়ের মাটি কেটে সাফ করে দিচ্ছে মাফিয়ারা। সেই কারণে সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বেআইনি মাটি কাটা রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই অনুযায়ী, গত ১৩ মার্চ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিব তপনকুমার সোম বর্ধমানের জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে (ডিএলএলআরও) চিঠি দিয়ে বেআইনি মাটি কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “আমার কাছে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছিল, কাটোয়া সংলগ্ন ভাগীরথী-অজয়ের পাড় থেকে বেআইনি মাটি কাটা হচ্ছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিবকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তপনবাবু বর্ধমানের আধিকারিকদের নিয়মিত পরিদর্শন করে মাটি কাটা বন্ধ ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন বলে দফতর সূত্রে খবর।
কাটোয়া মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের কালিকাপুর থেকে ট্রলি সমেত সাতটি ট্রাক্টর আটক করে পুলিশ। ওই গাড়িগুলিতে বেআইনিভাবে মাটি তোলা হচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, যে শ্রমিকেরা ভাগীরথীর পাড় থেকে মাটি কাটছিলেন, পুলিশের গাড়ি দেখে তাঁরা পালিয়ে যান। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাটোয়া ২ ব্লক ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য সব চেয়ে বেশি। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড় থেকে মাটি কেটে গাড়ি করে পাচার করে তারা। কয়েক দিন পুলিশ ও ভূমি দফতরের নড়ে চড়ে বসায় মাফিয়ারা চুপ ছিল। কিন্তু এখন আবার পরিস্থিতি আগের মতো। কাটোয়া ২ ব্লকের মাখালতোড় গ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষক বলেন, “রাস্তার ধারেই স্কুল। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও রয়েছে। স্কুলের পাশ দিয়ে ভাগীরথী পর্যন্ত সারা দিন ট্রলি সমেত ট্রাক্টর যাতায়াত করে। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। প্রসঙ্গত, ওই রাস্তায় বালি বোঝাই গাড়িতে দুর্ঘটনায় সম্প্রতি তিন জন বলি হয়েছেন বলে পুলিশও জানিয়েছে।
প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের কথা জানা সত্ত্বেও মাফিয়াদের উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? এ নিয়ে পুলিশ ও ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা পরস্পরের দিকে আঙুল তুলেছেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা জানান, নিয়মিত ভাগীরথীর পাড় পরিদর্শন করা হলেও মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য রুখতে পারছেন না তাঁরা। দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, “স্থানীয় বাসিন্দাদের মদতেই বালি চুরি হচ্ছে। মাফিয়ারা খাসজমির মাটিও কাটছে। জমির মালিকেরা মাটি বিক্রি করে মোটা টাকা রোজগার করছেন।” ওই দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের কথায়, “প্রতি গাড়ি পিছু জমি মালিকেরা ২০০ টাকা করে রোজগার করেন। আমরা গেলেই তারা মাফিয়াদের খবর দিয়ে দেন।” জমি মালিকদের অবশ্য বক্তব্য, মাফিয়াদের চাপের কাছে তাঁরা অসহায়। অন্য দিকে পুলিশের অভিযোগ, “ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর কার্যত সাহায্য করতে না চাওয়াতেই বেআইনি মাটি কাটাও বন্ধ হচ্ছে না।”
কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পিলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগই অবৈধ। ওই ভাটাগুলির জন্যই মাটি কাটে মাফিয়ারা। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর। তা সত্ত্বেও রমরমিয়ে ভাটা চলছে। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর) সৈকত দত্ত অবশ্য বলেন, “শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” |