রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩...
একটা[ভয়]কষ্টলজ্জাঘেন্না
মনি সময় আমার ঘুম বড় কম। তবে নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম আছে। পরীক্ষার আগে, কোনও জরুরি কাজের আগে এমন বেয়াদপ ঘুম পায় যে কে বলবে এ মেয়ে অন্য সময় ঘুম নিয়ে তুলকালাম করে। ঘর অন্ধকার নয় কেন? ও ঘরে টিভির আওয়াজ জোরে কেন? কে দুপুর বেলায় এত জোরে বাসন মাজছে এই সব বলে আমি সর্ব ক্ষণ বাড়ি মাথায় করে রাখতাম। এখনও যে রাখি না তা নয়। মা’র কাছে শুনেছি আমায় ঘুম পাড়ানোর পরিশ্রম প্রায় কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে তোলার পরিশ্রমের শামিল ছিল। যখন একটু বড় হলাম তখন গরমের দুপুরে যাতে ঘুমিয়ে পড়তে পারি, সেই জন্য মা টাইট করে দরজা-জানলা বন্ধ করে শুইয়ে দিত। পুরনো বাড়ি, জমাট খড়খড়ি। জানলা-দরজা বন্ধ মানে জমজমে অন্ধকার।
এ রকম একটা দুপুরে হঠাত্‌ আমার মনে হল, আরে, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এবং নিকষ কালো আমার চোখে যেন জমাট বাঁধতে শুরু করল। চোখ রগড়ালাম, তবু নাহ্! কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে কাঠ। কান্না পাচ্ছে। হাঁকুপাঁকু করে একটু আলো খুঁজছি, যাচিয়ে নেওয়ার জন্য আমি সত্যিই অন্ধ হয়ে যাচ্ছি কি না। তার পর কখন হঠাত্‌ জানলার একটা ফাঁক দিয়ে এক কণা আলো আমায় স্বস্তি দিল। যাক! দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু ভেতরের ভয় গেল না। একটু অন্ধকার হলেই আমি হাত দিয়ে একটা করে চোখ বন্ধ করে যাচিয়ে নিতাম, অন্ধকারটা বাইরের তো? আমার চোখের নয় তো! নিজেকেই বলতাম, এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। শুধু শুধু, কিছুর মধ্যে কিছু নেই, একটা উদ্ভট টেনশন পেড়ে আনা আর ভয় পাওয়া! তবু প্যানিক-টা নাছোড়। এক এক দিন রাত্রি বেলা যেই আলো নিভিয়ে শুতে যেতাম, অমনি এক দলা অন্ধকার চোখে বাসা বাঁধত, আবার সব যুক্তিবুদ্ধি ছেড়ে আছাড়িপিছাড়ি, আবার আলো খোঁজা।
এ রকম এক দিন থেকে আমি সত্যি ভাবতে শুরু করলাম, যদি অন্ধ হয়ে যাই, তা হলে কী করে জীবন কাটাব। প্রথম স্টেপ হিসেবে চোখ বন্ধ করে বাড়িতে হাঁটা প্র্যাকটিস করতে শুরু করলাম। বারান্দার পিলারে, আলমারিতে অবধারিত ধাক্কা। বাড়ির বড়রা অবাক এবং বিরক্তও। কিন্তু ছোট মেয়ের খামখেয়ালিপনা আর অদ্ভুত খেলায় ওরা অভ্যস্ত ছিল বলে তেমন কিছু বলল না। কেবল মা বকল: যদি আমার হাত-পা কেটে যায় তাহলে এ বার স্টিচের হাত থেকে মা আমায় মোটেই বাঁচাবে না। আমার গলা বুজে এল। মা’কে তো আর সত্যি কথাটা বলতে পারছি না। আমার আশঙ্কা প্রত্যয়ে বদলাতে থাকল। বিকেল বেলায় বারান্দায় গেলে খুব কষ্ট হত, আমি তো আর কিছু দিনের মধ্যে এ সব কিছুই দেখতে পাব না। তখন লাল জামা কী করে বুঝব?
রোজকার সিরিয়াস প্র্যাকটিসের ফলে চোখ বন্ধ করে বারান্দায় হাঁটা আয়ত্ত করে ফেললাম। পাল্লা দিয়ে অন্ধকারে কিছু না দেখতে পাওয়াও ফিরে আসতে লাগল। না ঘুমনোর প্রবণতা আরও বাড়তে থাকল। আপ্রাণ চেয়ে থাকতাম, যাতে সব কিছু দেখে নেওয়ার সময়টা বেশি থাকে।
একটা সময়ের পর এই অবসেশনটা কমে গেল। পড়াশোনার চাপ, কলেজ সব মিলিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি কমে এল। কিন্তু মিলিয়ে গেল না সে অন্ধকারে। এখনও মাঝরাতে অনেক সময় ধড়াস করে ওঠে। পাগলের মতো আলো খুঁজি। দৌড়ে বাথরুমে যাই। ভাবি, যাক, আজ বেঁচে গেলাম, কিন্তু সে দিন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.