লড়াইটা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে তবুও একটা অঙ্ক করা যেত। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইতে উঁকি মারতে শুরু করেছে যে আর্মান্দো কোলাসোর দলও।
অ্যান্ড্রু বরিসিচের গাড়িতে ওঠার আগে ইস্টবেঙ্গলের সাহেব কোচকে দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও নামী স্কুলের হেড স্যার। যাঁর সব ছাত্রই মাধ্যমিকে একসঙ্গে ফেল করেছে। এবং সেই রাগে যাঁকে সামনে পাচ্ছেন তাঁর বিরুদ্ধেই অগ্নিশর্মা।
“হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে! দেশের এক নম্বর টুর্নামেন্ট নিয়ে কি মজা হচ্ছে? কোনও লোক না মরলে মনে হয় দুপুর দু’টোয় ম্যাচ বন্ধ হবে না।” ঘাড় ঝাঁকিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরও থামেননি ব্রিটিশ কোচ। বরং আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে স্বর। “যারা বলছে সম্প্রচারের জন্য দুপুর দু’টোয় এই ম্যাচ করতে, তাদের মাঠে নেমে খেলতে বলুন। এই রোদে ফুটবলাররা ৬৫ বছরের কোনও লোকের মতো হাঁটাচলা করেছে। এটা পেশাদারিত্ব?”
কিন্তু আপনার ক্লাব কেন মানল? কেন এই গরমে কলকাতা থেকে তিন ঘণ্টা বাসে করে এসে খেলতে নামল আপনার টিম? চিডি-পেনদের কোচ এ বার সতর্ক। কিছুটা কুটনীতিকও। “ক্লাব কেন মানল সেটা কর্তারা বলতে পারবেন। আমি তো তিনটের সময় ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলাম,” বলে দেন এ বারও আই লিগ হারানোর আশঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকা মর্গ্যান। অন্তত দু’বার তিনি বললেন, “আমি কোনও অজুহাত খাড়া করছি না। কিন্তু শেষ পনেরো মিনিট সবাই বেদম হয়ে গিয়েছিল।”
ইস্টবেঙ্গল-এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচ যখন শুরু হয় তখন কল্যাণী স্টেডিয়ামে চড়া রোদ। তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর্দ্রতা ৯০ শতাংশ। মর্গ্যানের যুক্তি তাই ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এতেই তাঁর সব দোষ স্খলন হচ্ছে না। ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন তারকা ফুটবলার মর্গ্যানের স্ট্র্যাটেজি দেখে বিস্মত। বলে দিলেন, “আমি কোচ হলে ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটলেও চিডিকে মাঠে রাখতাম। তুলে নিতাম না।” |
গ্লানি নিয়ে ফেরা। ম্যাচের পর সস্ত্রীক বরিসিচ। |
উগা ওপারার পেটের গণ্ডগাল। সে জন্য চিডি-বরিসিচকে শুরুতে জোড়া স্ট্রাইকার হিসাবে নামিয়েছিলেন মর্গ্যান। বিরতির পর চিডিকে গোলের বল দেওয়া ছাড়া পুরো ম্যাচে বরিসিচের পারফরম্যান্স শূন্য। তা সত্ত্বেও চিডিকে বসিয়ে কেন নামানো হল ওপারাকে? রেখে দেওয়া হল বরিসিচকে। কেন রক্ষণাত্মক হল দল? তা নিয়ে গুঞ্জন সর্বত্র। সবথেকে বড় কথা, ওপারাকে ধোঁকা দিয়েই গোল করে গেলেন বিপক্ষের বদলি স্ট্রাইকার হেনরি। গোল লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গুরপ্রীতও। এয়ার ইন্ডিয়ার কোচ নৌসাদ মুসা বলছিলেন, “হেনরি আমার ট্রাম্প কার্ড ছিল। ইস্টবেঙ্গলকে ক্লান্ত দেখেই তাই নামিয়ে দিয়েছিলাম।”
পরের বার আই লিগে থাকবে না এয়ার ইন্ডিয়া। শুধু নিজেদের তাগিদেই জুনিয়র, প্রদীপরা লড়ে গেলেন। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল অন্তত ৪-২ গোলে ম্যাচ জিততেই পারত। ডিকা, বরিসিচ, চিডিরা সহজ সুযোগগুলো নষ্ট না করলে। পেতে পারত একটি পেনাল্টিও। প্রচণ্ড গরমে কোনও স্ট্র্যাটেজিই কাজ করেনি। সুযোগ পেলেই বিশ্রাম নিয়েছেন ফুটবলাররা। ফলে ম্যাচ গতি হারিয়েছে।
বাড়ি ফিরে নমাজের পর মেহতাব হোসেন বললেন, “চার্চিল পয়েন্ট নষ্ট করল। আমরা সেই সুযোগটা নিতে পারলাম না। খারাপ লাগছে।”
শনিবারের পর এটাই যে লাল-হলুদ সমর্থকদের মনের ক্যাচ লাইন। |
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, গুরবিন্দার (খাবরা), রাজু, রবার্ট, সঞ্জু (ইসফাক), মেহতাব, লালরিন্দিকা, পেন, বরিসিচ, চিডি (ওপারা)। |