ছয় থেকে নয় হতেই নয়ছয়
রাজ্যে বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে ভর্তুকির সিলিন্ডারের
রিবার-পিছু ভর্তুকির গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে নয় হতেই রাজ্যে কমেছে ভর্তুকিহীন বাণিজ্যিক গ্যাসের বিক্রি। তেল সংস্থাগুলির দাবি, এটা নিছক সমাপতন নয়। বরং গেরস্থের হেঁশেলের ভর্তুকির গ্যাস বেআইনি ভাবে হোটেল-রেস্তোরাঁ, এমনকী অটোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে কালোবাজারির সমস্যা। কারণ বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম ভর্তুকির গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি।
তার উপর সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে যুক্তমূল্য করের (ভ্যাট) হার বাড়ায় ১ এপ্রিল থেকে ফের প্রায় ১৪ টাকা (বর্তমান বাজাদরের হিসেবে) বাড়তে পারে ১৯ কেজি-র বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম। কেজিতে ৫০ পয়সা বাড়তে পারে অটো-এলপিজিও। সে ক্ষেত্রে ওই প্রবণতা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা তেল সংস্থাগুলির।
গত বছর প্রথমে পরিবার-পিছু ভর্তুকির গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’টিতে বেঁধে দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপে পিছু হটে কেন্দ্র। গত জানুয়ারিতে তা বাড়িয়ে করে ন’টি। তেল সংস্থাগুলির অভিযোগ, ওই নির্দেশের পর মাস ঘুরতে-না-ঘুরতে ফেব্রুয়ারি থেকে কমছে ভর্তুকিহীন বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি। গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে যোখানে রাজ্যে ৫ হাজার টনেরও বেশি ভর্তুকিহীন গ্যাস বিক্রি হয়েছে, সেখানে ফেব্রুয়ারিতে তা নেমে এসেছে ৩৮০০ টনে। উল্টো দিকে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গৃহস্থের জন্য ভর্তুকির সিলিন্ডারের গ্যাস বিক্রি বেড়েছে আগের দু’মাসের তুলনায় প্রায় ১৫০০ টন। জানুয়ারি পর্যন্ত অটোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজির বিক্রি ছিল মাসে ১৪০০ টনেরও বেশি। ফেব্রুয়ারিতে তা-ও নেমেছে ১২০০-র ঘরে।
তেল সংস্থাগুলির অভিযোগ, আসলে ভর্তুকির বাড়তি সিলিন্ডার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের পরিবর্তে। কারণ ১৯ কেজি-র বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম এখন কেজি প্রতি প্রায় ৮২ টাকা। অটো-র এলপিজি-র কেজি প্রতি দাম প্রায় ৯৬ টাকা। কিন্তু ১৪.২ কেজি ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকা। ফলে ভর্তুকির গ্যাস পেলে খরচ কমে। সংস্থাগুলির দাবি, কোটায় প্রাপ্য সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’টিতে বেঁধে দেওয়ার পর ওই প্রবণতা কমলেও ফের তা ঊর্ধ্বমুখী।
...ফস্কা গেরো
অন্য কারও কনজিউমার নম্বর জানা থাকলে, যে কোনও ফোন থেকে তাঁর নামে গ্যাস বুকিং সম্ভব। কারণ:
• আইভিআরএস ব্যবস্থায় ফোন নম্বর নথিভুক্তি এখনও বাধ্যতামূলক নয়।
• অনেক জায়গায় চালুই হয়নি আইভিআরএস।
• সরাসরি ডিস্ট্রিবিউটরের দোকানে ফোন করে গ্যাস বুকিং করা যায় এখনও।
• ফায়দা তোলা যায় বুকিংয়ের জন্য ডিস্ট্রিবিউটরের দোকানে
থাকা ‘ফ্রি ওয়্যারলেস ফোন’ ব্যবহারের।
• নম্বর নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক নয় এসএমএসের মাধ্যমে বুকিংয়ের ক্ষেত্রেও।
ব্যবহার যেখানেই হোক, খালি সিলিন্ডার ফেরত দিলে ভর্তুকির কোটার গ্যাস মিলবেই। তাই তা হাতবদলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন গ্রাহকও।
সংস্থাগুলির যুক্তি, হঠাৎ গৃহস্থের হেঁশেলে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে পারে না। কারণ গ্রাহকের সংখ্যা একই। আবার হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যাও ঝপ্ করে কমেনি। তাদের দাবি, সমীক্ষা অনুযায়ী, পরিবার পিছু বছরে গড়ে সাতটির মতো সিলিন্ডার (১০২ কেজি) লাগে। সেই হিসেবে অনেক পরিবারে অন্তত দু’টি ভর্তুতির সিলিন্ডার বাড়তি হতে পারে। আবার যেখানে এক বা দু’জনকে নিয়েই পরিবার, সেখানে তা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওই সব সিলিন্ডারই হাতবদল হয়ে যাচ্ছে অটো বা হোটেল, রেস্তারাঁ, ফাস্টফুড সেন্টারে। তেল সংস্থার এক কর্তা বলেন, “বাণিজ্যিক গ্যাসের বিক্রি কমলে আয় কমবে। ভর্তুকির সিলিন্ডার যত বেশি বিক্রি হবে, কেন্দ্রকেও ভর্তুকি দিতে হবে তত বেশি। ফলে বাড়বে রাজকোষ ঘাটতিও।”
কী ভাবে হাতবদল হচ্ছে ভর্তুকির সিলিন্ডার?
গ্রাহকের অজান্তে বা তাঁর সম্মতিতে দু’ভাবেই, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। তাদের বক্তব্য, গ্যাস বুকিংয়ের চালু ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র নয়। তার সুযোগ নিয়ে গ্রাহকের অজান্তে তাঁর নামে গ্যাস বুক করতে পারেন যে কেউ (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)। এ সব ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটরের দোকান বা ডেলিভারি-বয়দের একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও, তাঁরা তা মানতে নারাজ। ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, বুকিং-এ সময় সব কিছু খুঁটিয়ে দেখা হয়। যদিও সংস্থাগুলির দাবি, গ্রাহকের অজান্তে এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ তারা পাচ্ছে।
এই প্রবণতা ঠেকাতে গ্রাহকদের প্রতি তেল সংস্থার পরামর্শ, সকলেই আইভিআরএস পদ্ধতিতে তাঁদের ফোন নম্বর নথিভুক্ত করান। তাহলে অন্য ফোন থেকে কেউ তাঁর গ্যাসের বুকিং করছে কি না তা জানা সহজ হবে। পাশাপাশি ক’টি ভর্তুকির সিলিন্ডার মিলল তা ক্যাশ মেমো-তে লেখা থাকে। গ্যাস নেওয়ার সময় গ্রাহকেরা সেটাও খুঁটিয়ে দেখুন।
অনেক সময় ভর্তুকির বাড়তি সিলিন্ডার হাতবদলে গ্রাহকেরও ভূমিকা থাকে বলে অভিযোগ সংস্থাগুলির। কারণ আগে দু’টি সিলিন্ডার বুক করার মধ্যে কয়েক দিনের ব্যবধান বাধ্যতামূলক থাকলেও, এখন হাতে পাওয়ার পরদিনই আর একটি বুক করা যায়। শুধু নিয়মমতো ফেরত দিতে হয় একটি খালি সিলিন্ডার। এর আগে সেই নিয়ম চালু করার প্রস্তাব দিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে বলে সংস্থাগুলির অভিযোগ।
এ নিয়ে যাবতীয় অনিয়ম রুখতে সংস্থাগুলি আরও কড়া ব্যবস্তা নিতে চায়। কিন্তু কোথাও বাণিজ্যিক গ্যাসের বদলে গৃহস্থালির ভর্তুকির গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনেরই, দাবি তাদের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.