আর কিছু দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাবে। শেষ হবে আর্থিক বছরেরও। এরই মাঝে জেলার চারটি ব্লকের বিডিওদের অন্যত্র বদলি করায় সমস্যায় পড়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। এই পরিস্থিতিতে কোথাও তুলে আনা হয়েছে অন্য ব্লকের যুগ্ম বিডিওকে, কোথাও বা ব্লকের পুরো দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে যুগ্ম বিডিওকে।
সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে যে ক’জন বিডিও-র বদলি হয়েছে তাঁদের মধ্যে বীরভূমের চার জন আছেন। বোলপুর-শ্রীনিকেতনের অমল সাহা, সিউড়ি(১)-এর তাপস দে, নলহাটি(২)-এর গঙ্গাধর দাস ও মুরারই(২)-এর সোমনাথ পাল। এঁদের মধ্যে সোমনাথবাবু ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বাকি তিন জন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্লকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন ও আর্থিক বছরের সমাপ্তি এই পরিস্থিতির মাঝে কাজ সামাল দেওয়ার জন্য গঙ্গাধর দাসের জায়গায় এসেছেন নলহাটি ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য ও রাজনগর ব্লকের যুগ্ম বিডিও শঙ্খ ঘটককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিউড়ি ১ ব্লকের। বাকি দু’টি ব্লকের যুগ্ম বিডিওরাই ওই ব্লকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাই পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্ম ও নির্বাচন কীভাবে পার হবে, তা নিয়ে চিন্তিত কর্মী থেকে শুরু করে অন্যান্য আধিকারিকেরা।
অবস্থাটা আরও খারাপ নলহাটি ২ ব্লকের। কারণ, বিডিও অন্যত্র যেমন বদলি হয়ে গিয়েছেন, তেমনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে (পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক, ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রোগ্রাম অফিসার, সহকারী বাস্তুকার) থাকা আধিকারিকেরাও অন্যত্র বদলি হয়েছেন। ওই তিন আধিকারিকের বদলি হওয়া প্রসঙ্গে গঙ্গাধরবাবু বলেন, “তাঁদের বদলির নির্দেশ আগেই ছিল। ব্লকের কাজকর্ম চালাতে গিয়ে তাঁদের জোর করে আটকে রেখেছিলাম।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্লকের এক কর্মী বলেন, “পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ঠিক ফাইনাল ম্যাচের আগে কোচকে অপসারণ করলে টিমের অবস্থা যেমন হয়, তেমনি আমাদের অবস্থা। কী ভাবে কাজকর্ম হবে বুঝতে পারছি না।” শুধু কর্মীরাই নন, এই বদলি নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের, বেলাল হোসেন বলেন, “আর ক’দিন পরেই আর্থিক বছরের সমাপ্তি হবে। বিডিও সব কাজ দেখাশোনা করতেন। তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে দিলে, কাজ বুঝে উঠতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে। হঠাৎ করে এ ভাবে বদলি করা ঠিক হয়নি।”
অন্য দিকে, বোলপুর-শ্রীনিকেতন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের, আনন্দ কোঁড়ার আশঙ্কা, “পঞ্চায়েত সমিতির উন্নয়নমূলক কাজ (রূপপুর পঞ্চায়েতের আমার কুটীরে ইকো ট্যুরিজিম পার্ক, আলবাঁধা-সর্পলেহনা পঞ্চায়েতে বড়দিঘির পাড় বাঁধিয়ে মাছ চাষ ইত্যাদি) বিডিও যে চিন্তাধারায় করছিলেন, তাতে অবশ্যই বাধাপ্রাপ্ত হবে।” কাজ করতে যে সমস্যা হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন বিডিওদের কথায় স্পষ্ট। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, “নতুন এসেছি। কাজ বুঝতে সময় তো লাগবে।”
কিন্তু কেন বদলি করা হয়, তা স্পষ্ট নয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, “সরকারি নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।”
|