গত ১৯ মার্চের ঘটনা। সিজারের পর বহরমপুর মাতৃসদনের ডাক্তারেরা ঝর্ণা বিবিকে বলেন, “শরীরে রক্ত কম। জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দিতে হবে।” ঝর্ণা বিবির আত্মীয়দের কালঘাম ছোটে রক্ত জোগাড় করতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গরম পড়তে না পড়তেই জেলা জুড়ে নেমে এসেছে রক্তের সংকট। অথচ, দফতরে কিটের আকাল।
কিটের অভাবে গত ৯ মার্চ থেকে জেলার কোথাও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা যাচ্ছে না। যদিও সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি মাসের ১৪ তারিখ থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছে রক্তদান শিবিরগুলি। দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ১৯ মার্চ আরএসপি বেলডাঙা পুর এলাকায় ‘সম্পর্ক’ হলে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে চেয়েছিল। জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়, কয়েকশো লোক রক্তদান করবেন। কিন্তু ১৪ মার্চ শিবিরের সংগঠকদের জানানো হয়, কিট বাড়ন্ত। তাই রক্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
পিএসইউ-এর জেলা সভাপতি তথা আরএসপি-র বেলডাঙা পূর্ব লোকাল কমিটির সম্পাদক আরাফাত শেখ বলেন, “আমাদের রক্তদান কর্মসূচী কিটের অভাবে ভেস্তে গেছে। প্রায় ১০০ জনের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রীও ছিলেন। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক জানায়, কীট না থাকায় রক্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের আয়োজন প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার, পোস্টার, ফেস্টুন সবই হয়েছিল সারা।”
শুধু বেলডাঙাতেই নয়, জেলার অন্যত্রও বাতিল হয়েছে অনেক রক্তদান শিবির। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বহরমপুর, লালবাগ, জঙ্গিপুর সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কিটের অভাবে আয়োজন প্রায় শেষ হওয়া সত্ত্বেও ভেস্তে গেছে রক্তদান শিবির। গত রবিবারই জেলা কংগ্রেস সাগরদিঘিতে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছিল। ঠিক ছিল ৩৮০ জন রক্ত দেবে। কিন্তু ব্যাগের স্বল্পতার দরুণ ১৭৩ জনকে রক্ত না দিয়েই শিবির থেকে থেকে ঘুরে যেতে হয়। কীটের সংকটের কথা মেনেছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, “বর্তমানে কিটের অভাব রয়েছে। তাই ১৪ মার্চ থেকে জেলায় কোনও রক্ত দান শিবিরের আয়োজন করা যাচ্ছে না। সমস্যা এপ্রিল পর্যন্ত গড়াবে বলে মনে হচ্ছে।” কিন্তু ততদিনে সৃষ্টি চাহিদা ও যোগানের ফারাক পূরণ হবে কী করে? প্রভাসবাবুর বক্তব্য, “আসলে এই কিট সরবরাহ করে স্টেট এইড্স প্রিভেনশন কন্ট্রোল সোসাইটি। আমরা আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলি থেকে তা সংগ্রহ করি। এখন সরবরাহ বন্ধ। তাই এই হাল।” |