চিকিৎসায় গাফিলতিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগে কর্তব্যরত নার্সদের মারধরের পরে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সৌমেন সেন (৩৭)। ঘটনার সময়ে পুলিশ ক্যাম্পের নিরাপত্তারক্ষীরা গিয়েও ভাঙচুর আটকাতে পারেননি। পরে ইংরেজবাজার থানার আইসির নেতৃত্বে কমব্যাট ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ নার্সরা নিরাপত্তার দাবিতে উপাধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসক না-থাকায় সমস্যার সূত্রপাত। সব শুনে কলেজের উপাধ্যক্ষ মহম্মদ রশিদ ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হবে বলে আশ্বাস দিলে নার্সরা শান্ত হন। মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে মারধর, ভাঙচুরের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপাধ্যক্ষ বলেন, “সৌমেনবাবু জন্ডিসে আক্রান্ত ছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর চিকিৎসাও হয়েছে। কিন্তু মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের চিকিৎসক ছিলেন না বলে রোগী ও নার্সদের অভিযোগ। ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হবে। উত্তর পাওয়ার পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক কৌশিক ঘোষের দাবি, তিনি হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “আমার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ডিউটি। আমি অন্য ওয়ার্ডে ছিলাম। যা বলার উপাধ্যক্ষকে বলব।” |
মালদহ শহরের বিবিগ্রামের ব্যবসায়ী সৌমেনবাবু জন্ডিসে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পরিবারের লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ভর্তি করার পরে চিকিৎসক তাঁকে দেখেন। ওষুধ ও স্যালাইন চলছিল। মৃত রোগীর দাদা নির্মলবাবু বলেন, “ভর্তি করার পর ভাই আমাদের সবার সঙ্গে কথা বলেছে। বেশ ভালই ছিল। বেলা ১টা থেকে ভাইয়ের অবস্থার অবনতি হয়। আমি ও আমার ভাইয়ের স্ত্রী ১৫-১৬ বার নার্সদের ঘরে গিয়ে সেটা জানিয়েছি। চিকিৎসককে ডাকতে বলেছি। নার্স কিংবা চিকিৎসক কেউ ভাইকে দেখতে যাননি। যখন তাঁরা পৌঁছন, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।” এর পরে মৃত রোগীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। উত্তেজিত জনতা মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের নার্সদের বসার জায়গায় হামলা শুরু করে। কত্যবরত তিনজন নার্সের উপর চড়াও তাঁদের চড় মারেন বলে অভিযোগ। পরেই নার্সদের বসার টেবিল-চেয়ার ও দরজা জানালার কাঁচ ভেঙে সমস্ত ফাইলপত্র তছনছ করা হয় বলেও অভিযোগ। উপাধ্যক্ষ ওয়ার্ডে ঢুকতেই নার্সরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভরত নার্সদের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, “ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকলে এমন অবস্থা হত না। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে একজন চিকিৎসককে ডেকে আনি। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হল, চিকিৎসকদের জন্য কেন নার্সরা মার খাবেন? আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।” |