ঘুম থেকে উঠেই জলের লাইনে দাঁড়ানোর ছোটাছুটি শুরু হয় শেফালি দাস, গীতা পাশোয়ানদের। কারণ, জল আসার পরে ঘণ্টাখানেক ঠিক ঠাক মেলে। তার পরেই সরু সুতোর মতো জলের ধারা। তাতে জলের পাত্র ভরতে অনেক সময় লেগে যায়। কোনদিন জল পড়াই বন্ধ হয়ে যায়। শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক বস্তির জল-ছবিটা এমনই। এলাকার কাউন্সিলর স্বপন চন্দের কাছে রোজই অভিযোগ জমা পড়ে। তিনি দেখা হবে বলে আশ্বাসও দেন। কাজ করাতে পারেন না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাই সপ্তাহ দুয়েক আগে যখন জলের কলগুলি নীল-সাদা রঙে সাজছে, তখন বাসিন্দারা আশায় বুক বাঁধেন। তাঁরা ভাবেন, নিশ্চয়ই জল সরবরাহও ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু, কলের বাইরের চেহারা মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রঙে সাজলেও পানীয় জল সরবরাহের হাল অনেক জায়গায় আগের মতোই বেহাল। অন্তত, ৪৭টি ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা তেমনই বলছেন। এমনকী, কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বপন চন্দ বলেন, “আমি ভেবেছিলাম এবার বোঝ হয় জলটা ঠিকঠাক সরবরাহ হবে। সে সবের দিকে না-হেঁটে স্রেফ রঙ করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করা হল। সরবরাহের ব্যাপারটা অন্ধকারেই রয়ে গেল।”
বস্তুত, জল সরবরাহের হাল না-ফিরিয়ে কলগুলি রং করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হল তা নিয়ে পুর মহলেই প্রশ্ন রয়েছে। বামেরা তো বটেই, কংগ্রেস-তৃণমূলের অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে। |
পুরসভার বিরোধী দল নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “নীল সাদা রং করে দলের প্রচার করা হচ্ছে। কলের মাথা, প্ল্যাটফর্ম তৈরি না করে রং করার কোন যৌক্তিকতা নেই। শিলিগুড়ির নাগরিকরা সবই বুঝতে পারছেন।” এই মুহূর্তে শিলিগুড়ি শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে গেলেই চোখ আটকাবে রাস্তার ধারে থাকা নীল-সাদা রঙের স্ট্যান্ড পোস্টে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি অফিস, সেতু,রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলিতে ইতিমধ্যে লেগেছে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের রং। এবার সেই রং লেগেছে জলের কলগুলিতে। শহরে নিয়মিত জল সরবরাহ হয় না এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু জল সমস্যার সমাধান না করে নীল সাদা রং করাতে উদ্যোগী হয় পুরসভা। জল বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা ওই কাজ করেন। পুরসভা সূত্রে খবর, ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় রঙের জন্য। তাঁর যুক্তি, “সকলের সঙ্গে আলোচনা করে জলের কল রং করার সিদ্ধান্ত হয়।”
অথচ একাধিক জলকলের মুখ ভেঙে গিয়েছে। কোথাও স্ট্যান্ড পোস্ট ভাঙা। তার উপরেই রঙের পোচ দেওয়া হয়েছে। কলের মুখ না-থাকায় হাকিমপাড়া শান্তি মোড়ের কাছে দুটি স্ট্যান্ড পোস্টে দিনভর জল পড়ে। একই অবস্থা নবীন সেন রোডের একটি স্ট্যান্ড পোস্টেও। আশ্রমপাড়া, মিলনপল্লি, শান্তিনগর, দেশবন্ধুপাড়া, রথখোলা, কলেজপাড়া সহ বহু এলাকায় একই জল অপচয়ের ছবি দেখা যায়। |
আজ বিশ্ব জল দিবস |
• স্ট্যান্ড পোস্ট: ১৩৫৮
• বাণিজ্যিক ও বাড়ি-সহ জলের সংযোগ ২১,৮৭৬
• জলাধারের সংখ্যা: ১৭টি
• রোজ চাহিদা: ৪৮০০০-৫০০০০ মিলিয়ন লিটার
• জল পাওয়ার সময়: সকাল-বিকাল নিয়মিত ২ ঘন্টা
• কিছু এলাকায় জল পাওয়া যায়: ২৫-৩০ মিনিট |
|
শিলিগুড়ি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জলের সমস্যা একটু বেশিই। সে জন্য সেখানে দুর্গানগর, কুমারটুলি, তেতুঁলতলা, মজুমদার কলোনি এলাকায় জলের পাইপলাইন সহ অন্যান্য কাজের জন্য ৯১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে পুরসভা। কিন্তু, সেই কাজ এখনও হয়নি। এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই পুরসভায় গিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলেন, “কোন কাজটা আগে করতে হবে সেটা ভাল করে চিন্তা করা দরকার। এর বেশি আপাতত কিছু বলছি না।” বাম আমলে পুরসভার জল বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মুকুল সেনগুপ্ত। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মুকুলবাবু বলেন, “৩০০ কোটি টাকার জল প্রকল্প হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নতুন জলাধার হওয়ার কথা ছিল। সে সব হল কই? নীল-সাদায় স্ট্যান্ড পোস্ট রাঙিয়েই দায়িত্ব সারা হল।” |