জোড়া সমবায় বিল পাশ করাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক এবং স্বৈরতান্ত্রিক কাজ করার গুরুতর অভিযোগ আনল বিরোধী বামফ্রন্ট। সরকারের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য বিধানসভায় বৃহস্পতিবার নথিভুক্ত করিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তার পরেই কক্ষত্যাগ করেছেন বাম বিধায়কেরা। চলতি অধিবেশনে প্রথম বার।
সমবায়মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী এ দিন জোড়া বিল উত্থাপনের পরে প্রথম বলার কথা ছিল সিপিএমের মহম্মদ হেদায়েতুল্লার। কিন্তু বিরোধী দলনেতা উঠে জানান, আদালতে এ নিয়ে একটি মামলা চলছে। অতএব একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিধানসভায় বিল আনা যায় না। এ নিয়ে ভোটাভুটির আবেদন জানালে স্পিকার তা মেনে নেন। ভোটের ফল দাঁড়ায় বিরোধীদের ৪৬, শাসক পক্ষে ১১৮। কিন্তু তার পরে সূর্যবাবু বলেন, এই বিল আনার পিছনে সরকারের উদ্দেশ্য হল, পঞ্চায়েতের মতো সমবায়গুলিও দখল করা। এর পরেই তাঁরা সভা ত্যাগ করে চলে যান। অর্ডিন্যান্সের পরে বিলের মাধ্যমে রাজ্যে সমবায়গুলির মেয়াদ পাঁচ থেকে কমে তিন বছর হচ্ছে।
একই বিষয়ে পরস্পরের উপরে নির্ভরশীল দু’টি বিল একসঙ্গে পেশ করার ক্ষেত্রে বাধা আছে বিধানসভার কার্যবিধির ৬৮ নম্বর ধারায়। বিশেষ প্রস্তাব এনে ওই ধারা সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড করে এ দিন বিলদু’টি পাশ করা হয়েছে!
সূর্যবাবু বলেন, “আমরা বারবার বলছি, এই সরকারের প্রবণতা হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক পথে যাওয়া। যে ভাবে নির্বাচিত পঞ্চায়েত ও পুরসভাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সেই ভাবেই সমবায় দখল করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপে বৈধতা দেওয়ার জন্য দু’টো অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছিল, সেটা এখন বিল হিসাবে আনা হল। সংসদে যখন এই নিয়ে সংবিধান সংশোধনী পাশ হচ্ছে, এখানে তার উল্টো একটা বিল আনা হচ্ছে!” বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল অর্ডিন্যান্স নিয়ে। কয়েকটি ধারা সংবিধান-বিরোধী বলে আদালত খারিজ করে দিয়েছে। একটি অর্ডিন্যান্স আদালতের বিচারাধীন। সে সবের পরোয়া না-করেই সরকার বিল নিয়ে চলে এল! যে ভাবে বিল আনা হল, তাতে বিস্মিত কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও। তাঁর বক্তব্য, “বিধানসভার রীতি-নীতি, নিয়ম-শৃঙ্খলা মানার ক্ষেত্রে এই অধিবেশনে বেশ কিছু বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। আগে সরকারে ছিলাম কিন্তু কিছু করার ছিল না। এখন প্রধান বিরোধী দল না-হয়েও যথাসাধ্য প্রতিবাদ করছি। যে ভাবে বিধানসভা চলছে, গুরুত্ব সহকারে তার পর্যালোচনা হওয়া উচিত।” |