প্রাথমিকে শিক্ষকের প্রতি পদের জন্য পরীক্ষা দিচ্ছেন প্রায় ১০০ জন। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লক্ষ। প্রশাসনের কর্তারাই বলছেন, রাজ্যের ইতিহাসে কখনও এত পরীক্ষার্থী এক সঙ্গে পরীক্ষা দেননি। আগামী ৩১ মার্চ রাজ্য জুড়ে পরীক্ষা হবে। এত জনকে কোথায় বসতে দেওয়া হবে, কেমন করে হবে নজরদারি, সেই চিন্তাতেই প্রশাসনের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানাচ্ছে, প্রায় ৩৬ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হবে ৩১ মার্চ। আগে একটি পদের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ জন আবেদনকারীর পরীক্ষা নেওয়া হত। তার চেয়ে বেশি আবেদন জমাই নেওয়া হত না। সেই নিয়মে পরীক্ষা হলে এ বার বড় জোর সাড়ে পাঁচ লক্ষ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা নিতে হত। কিন্তু রাজ্যে সরকার বদলের পরেই আগের আইনে বদল ঘটিয়ে বলা হয়, যত জন আবেদনকারী প্রত্যেকের পরীক্ষা নিতে হবে। গোল বেধেছে সেখানেই।
রাজ্যে সব চাইতে বেশি পরীক্ষার্থী হয় মাধ্যমিকে। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ১০ লক্ষের কিছু বেশি ছাত্রছাত্রী। স্কুল সার্ভিস কমিশনের শেষ পরীক্ষায় বসেছেন প্রায় ছয় লক্ষ। প্রাথমিকে নিয়োগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তাদের বহু দূরে ফেলে দিয়েছে। জেলায়-জেলায় শুধু প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ডাক বিভাগের বিল হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার।
কয়েক জন জেলাশাসক অবশ্য আগেই আপত্তি তুলে জানিয়েছিলেন, এত বড় আয়োজন করতে গিয়ে কোনও বিপত্তি হলে তার প্রভাব পঞ্চায়েত ভোটে পড়তে পারে। এই আশঙ্কায় আপত্তি করেন তৃণমূলের কয়েক জন প্রথম সারির নেতাও। কিন্তু ইতিমধ্যেই দেড় হাজার কিলোমিটার দূর থেকে প্রশ্নপত্র ছেপে এসে গিয়েছে এবং তারিখ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, এই যুক্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ পরীক্ষা পিছোতে রাজি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছিল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরীক্ষা পরিকাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধা করা যাচ্ছে না। কেননা, দুইয়ে মিলিয়ে বড় জোর কুড়ি লক্ষ পরীক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা করা যায়। তাই জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এখন সব কাজ ফেলে তাঁরা পরীক্ষার তদারকিতে ব্যস্ত। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদেও রাতে জেগে প্রস্তুতি চলছে। চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যও কর্মীদের সঙ্গে প্রায়ই সারা রাত থাকছেন।
ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার কিছু স্কুল জানিয়ে দিয়েছে, নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের জায়গা দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো তাদের নেই। শেষ মুহূর্তে এলাকার একাধিক কলেজে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় এমন স্কুলে পরীক্ষার আসন পড়েছে যেখানে এমনকী মাধ্যমিক পরীক্ষার আসনও পড়ে না। সেই এলাকায় কীভাবে পরীক্ষার্থীরা পৌঁছবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একই অবস্থা কলকাতাতেও। এরই মধ্যে রাজ্যের বেশির ভাগ থানায় প্রশ্নপত্র পৌঁছে গিয়েছে।
পরিস্থিতি দেখে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলাশাসকের মন্তব্য, “এক দফায় যেমন ভোট করানো যায় না, একই দিনে এত জনের পরীক্ষা নেওয়াও প্রায় অসম্ভব।” প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অবশ্য বলছে, একই নিয়োগের জন্য দু’টি আলাদা দিনে পরীক্ষা নেওয়া যায় না। বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই নিয়ে মামলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা চলেছে।
রাজ্য সেই ঝক্কিতে যেতে চায়নি। তাই এই ব্যবস্থা। ফলে মার্চের শেষে মস্ত পরীক্ষার সামনে রাজ্য সরকারই। |