সরকারি অনুদানে চলা বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে আপস-বদলির ব্যবস্থা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ বার তাঁদের জন্য সাধারণ বদলি নীতি চালু হতে চলেছে। তবে এই বদলি আবশ্যিক নয়। যাঁরা চাইবেন, শুধু তাঁদের জন্য।
স্কুলে সাধারণ বদলি ব্যবস্থা চালু করার জন্য বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিল এনে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করল রাজ্য সরকার। এর পরে বিধি তৈরি করে এই বদলি নীতি বলবৎ করতে মাস দুয়েক সময় লাগবে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
রাজ্যের বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুলই চলে সরকারের আর্থিক অনুদানে। স্কুলগুলির মালিকানা সরকারের না-হলেও সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন-সহ প্রায় সব খাতেই টাকা জোগায় রাজ্য। পরীক্ষা নিয়ে সিএসসি নিয়োগের সুপারিশ পাঠায় পরিচালন সমিতির কাছে। স্কুলগুলির চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ থাকে পরিচালন সমিতির হাতেই। তারাই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র দেয়। ফলে এই ধরনের স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের বাড়ি থেকে অনেক দূরের স্কুলে যেতে হয়।
এই বিষয়টি খেয়াল রেখে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে আপসে বদলির ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই চালু করেছে রাজ্য সরকার। এসএসসি সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত প্রায় আট হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা আপস-বদলির সুবিধা পেয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বিধানসভায় বলেন, “সাধারণ বদলির ব্যবস্থা চালু হলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা পছন্দমতো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছি আমরা।”
দাবি অনেক দিনের হলেও শিক্ষকদের বদলির বিল বিধানসভায় পেশের সময় নিয়ে একটা জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, বিপুল জয় নিয়ে ক্ষমতায় এলেও রাজ্যের শিক্ষককুলে তৃণমূলের প্রভাব এখনও তুলনায় কম। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বদলি-বিল পাশ করানোটাকে তাই অনেকে শিক্ষকদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন।
যদিও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবিটিএ-সহ স্কুলশিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায় এ দিন বলেন, “শিক্ষকদের জন্য বদলির নীতি স্বাগত। তবে দেখতে হবে, এর সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনও রকম বৈষম্য না-হয়।”
কী ভাবে বদলির সুযোগ মিলবে?
বদলি সংক্রান্ত সংশোধনীটিতে বলা হয়েছে, স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে অন্তত পাঁচ বছর কাজ করার পরে বদলির জন্য নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করা যাবে। কোন স্কুল থেকে কোন স্কুলে বদলি হতে চান, তা জানাতে হবে। কোন স্কুলে কোন পদ শূন্য রয়েছে, এসএসসি আগেই তা জানিয়ে দেবে। এসএসসি-র চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল জানান, এক জন স্থায়ী শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাঁর গোটা চাকরিজীবনে মোট দু’বার বদলির সুযোগ পেতে পারেন। এক বার সাধারণ বদলি এবং এক বার আপস-বদলি। আর এই গোটা প্রক্রিয়াটিই নিয়ন্ত্রিত হবে এসএসসি-র মাধ্যমে।
তা হলে কি এই ধরনের বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্মতির প্রয়োজন হবে না?
চিত্তবাবু বলেন, “বিধি তৈরির সময় এই সব বিষয় দেখা হবে।” শুধু সাধারণ শিক্ষক নয়, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সমান ভাবে বদলি নীতির সুবিধা পাবেন। শুধু তা-ই নয়, সংশোধনীতে বলা রয়েছে, স্কুলের শিক্ষাকর্মীরাও এর আওতায় আসবেন। যদিও চিত্তবাবু জানান, শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে বদলির চাহিদা বেশ কম। কারণ, সাধারণ ভাবে তাঁদের নিয়োগ হয় জেলার মধ্যেই। |