আরও এক বার সংঘাতের মুখোমুখি রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার রাজ্যের বিডিও-দের বদলি নিয়ে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে একতরফা ভাবে রাজ্যের ১৯টি ব্লকের বিডিও বদলি নিয়ে বৃহস্পতিবার আপত্তি জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সরকার অবশ্য নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। কমিশনের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে সরকারের বক্তব্য, এখনও পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। তাই বিডিও-দের বদলি সম্পূর্ণ সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। বিডিও-দের বদলি করার কথা কমিশনকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
সরকার ওই বিডিও-দের বদলির আদেশ জারি করেছে বুধবার। কমিশনের যুক্তি, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য যখন চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে, তখন এত ব্লক থেকে বিডিও সরিয়ে দেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত ছিল। কমিশন তাই কোনও ভাবেই এই বদলি মানছে না। সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক। ভোটার তালিকা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা, আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা বলবৎ করা, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এবং বুথ নির্বাচন করা, ভোটকর্মীদের তালিকা চূড়ান্ত করার পরে এখন বিডিও-দের তত্ত্বাবধানেই পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে স্ট্রংরুমে ব্যালট বাক্স পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। নিয়মমতোই পঞ্চায়েত নির্বাচনের যাবতীয় কাজ ব্লক স্তরে তত্ত্বাবধান করছেন বিডিও-রা। তাঁদের হঠাৎ সরিয়ে দিলে ভোটের সময় বড় সমস্যা হতে পারে। কারণ, ওই ১৯টি ব্লকে নতুন বিডিও নিয়োগ করেনি সরকার। উল্টে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুগ্ম বিডিও-দের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে বিডিও-দের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। যুগ্ম বিডিও-রা আবার সরকারি ভাবে পঞ্চায়েত সচিবের অধীনে কাজ করেন। ফলে নির্বাচনের কাজ পরিচালনা করার সময় এই নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে কমিশনের একাংশ।
কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, “সাধারণত ভোট-পর্বে কোনও অফিসারের কাজ কমিশনের পছন্দ না-হলে সরকারের কাছে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটাই হয়েছে। ওই ১৯ জন বিডিও সম্পর্কে কমিশনের কাছে কোনও খারাপ রিপোর্ট নেই। তাঁরা যথাযথ ভাবেই ভোটের কাজ করছিলেন। তাই সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে।”
সরকার অবশ্য সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে নারাজ। সরকারি সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলার শাসক দলের নেতা, বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে ওই সব বিডিও-র বনিবনা হচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে শাসক দলের কয়েক জন নেতা অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট বিডিও-রা তাঁদের কথা শুনছেন না। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশে তড়িঘড়ি বদলি করা হয় ওই ১৯ বিডিও-কে। বিডিও-তেই শেষ হচ্ছে না বদলি পর্ব। মহাকরণের খবর, পরের ধাপে কয়েক জন অতিরিক্ত জেলাশাসক সরকারের কোপে পড়তে চলেছেন। তাঁদের তালিকাও তৈরি
হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রকেও বদলি করা হয়েছে। ওই জেলায় তাঁর এক বছর মেয়াদও পূর্ণ হয়নি। সেখানে জেলাশাসক করে পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অধীন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব পি বি সেলিমকে।
কমিশনের সচিব বদলকে কেন্দ্র করেও দু’পক্ষে বিরোধ বাধে। তখন কমিশনের সচিব তাপস রায়কে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের যুগ্মসচিব তাপস চৌধুরীকে ওই পদে বসাতে চেয়েছিল মহাকরণ। কমিশন তীব্র ক্ষোভ জানানোয় রাজ্য পিছু হটে। বিরোধের মাত্রা চড়ে ক’দফায় পঞ্চায়েত ভোট হবে, তা-ই নিয়ে। ১৯ জন বিডিও-র বদলিকে কেন্দ্র করে এ বার কমিশন-রাজ্য দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এল। |