তৃণমূলের পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা করলেন তৃণমূলেরই এক সংখ্যালঘু নেতা। অভিযোগ, পার্ক করার উদ্দেশে জোর করে তাঁর জমি অধিগ্রহণ করছে সরকার। সেই মামলারই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্য, সরকার কি তার ঘোষিত জমি নীতি পরিবর্তন করেছে? ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান সচিব আর ডি মিনা রাজ্য সরকারের ওই জমি অধিগ্রহণ নীতি ঘোষণা করেন। যাতে বলা হয়েছিল, কোনও প্রকল্পের জন্য জোর করে জমি নেওয়া হবে না। তার থেকেই এখন সরকার সরে আসছে কি না, প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট।
সম্প্রতি নিউ আলিপুরে একটি সাত কাঠা জমিতে কলকাতা পুরসভা একটি পার্ক করবে বলে কলকাতার জমি অধিগ্রহণ কালেক্টর জমিটির মালিক নুরুল হুদা লায়েককে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি পাঠান। জমির মালিক প্রথাগত ভাবে ভূমি অধিগ্রহণ কালেক্টরের কাছে আপত্তি জানান। অভিযোগ, আপত্তি জানানোর পরেও ওই জমির মাপজোক করা হয় এবং রাজ্য সরকার জমির ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করবেন বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হুদা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তার শুনানির সময়েই বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান এই অধিগ্রহণে সরকারের নীতির বিরোধিতা হচ্ছে কি না।
এই মামলা না মেটা পর্যন্ত অধিগ্রহণ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে, তাদের ঘোষিত জমি নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে কি না। তেমন প্রয়োজনে সরকার জোর করে অধিগ্রহণ করবে কি না। সরকার যদি নীতির কোনও পরিবর্তন করে থাকে, তা হলে হাইকোর্টকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে।
এই মামলার শুনানির সময়ে আবেদনকারীর আইনজীবী হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলে, সরকার কোনও প্রকল্পের জন্য জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না। সরকারের বিভিন্ন দফতরকে মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রীর এই ইচ্ছার কথা জানানো হচ্ছে। যদি কোনও দফতর কোনও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন অনুভব করে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হবে। হারাধনবাবুর বক্তব্য, এই নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও, কলকাতা পুরসভার ইচ্ছেকে মূল্য দিয়ে কলকাতার ভূমি অধিগ্রহণ কালেক্টর জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রীর জমি নীতির বিরুদ্ধে কোথাও ষড়যন্ত্র হচ্ছে? ১৮ ফেব্রুয়ারি অধিগ্রহণের এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নিউ আলিপুরে ওই জমির পাঁচিলে অধিগৃহীত জমি বলে বোর্ড লাগানো হয়েছে।
রাজ্য সরকারের জমি নীতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং এই অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেখে বিচারপতি জানতে চান, এই বিরোধ কেন? সরকারের নীতি যদি পরির্তিত না হয়, তা হলে এই অধিগ্রহণ করা যায় না। তিনি জানতে চান, মুখ্যমন্ত্রী কি এই অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ অনুমতি দিয়েছেন? এ সবই হলফনামা দিয়ে রাজ্যকে জানাতে বলা হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরেই আবেদনকারী নুরুল হুদা নিউ আলিপুরের ও ব্লকে তাঁর ৭ কাঠা জমিতে প্ল্যান অনুমোদনের আবেদন করেন। কিন্তু সেই অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নুরুল হুদার অভিযোগ, এ বিষয়ে তিনি মেয়রের সঙ্গে দেখাও করেন। মেয়র তাঁকে বন্ধুর মতো পরামর্শ দিয়ে জমিটি বিক্রি করে দিতে বলেন। বারবার আবেদন করেও অনুমোদন না পাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন নুরুল হুদা। হাইকোর্ট অবিলম্বে প্ল্যান অনুমোদন করার নির্দেশ দেয়। তবু অনুমোদন মেলেনি বলে অভিযোগ।
মেয়রের বিরদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মেয়রকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না, তা জানাতে বলে। এর মধ্যেই মেয়রের আইনজীবী হাইকোর্টে জানান রাজ্য সরকার ওই জমি অধিগ্রহণ করছে। কলকাতা পুরসভা ওখানে শিশুদের জন্য একটি পার্ক তৈরি করবে। এর পরেই কয়েক দিনের মধ্যেই কলকাতার ভূমি অধিগ্রহণ কালেক্টর ওই জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। |