বার বার কুকুরের হামলা
হরিণ বাঁচাতে বন দফতরে আর্তি গ্রামবাসীর
চিত্র ১: খাবারের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে গ্রামে ঢুকে পড়েছিল একটি চিতল হরিণ। তাকে ঘিরে ধরে কুকুরের দল। কয়েকজন গ্রামবাসী তেড়ে যান। ততক্ষণে কুকুরদের দাঁত-নখে হরিণের দেহ ফালা ফালা। গ্রামবাসীরা হরিণটিকে উদ্ধার করে খবর পাঠান বনকর্মীদের। পরে সেই হরিণ সুস্থ ফের জঙ্গলে ফেরে।
চিত্র ২: এক হরিণি। তার সঙ্গ পেতে দুই পুরুষ হরিণের মধ্যে বাধল তুমুল লড়াই। জঙ্গলে যাওয়া কয়েকজন গ্রামবাসী গুরুতর জখম অবস্থায় পরাজিত হরিণটিকে উদ্ধার করেন। কিন্তু চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায়নি তাকে।
দু’টি ঘটনাই পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের দণ্ডহিত গ্রামের। এই গ্রামেরই গা ঘেঁষে উঠে গিয়েছে পাহাড়। সেই পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলে রয়েছে এক পাল হরিণ। পাহাড় থেকে নেমে এসে ওই হরিণের পাল মাঝে মধ্যেই সাবাড় করে দেয় প্রচুর শাক-সব্জি। তবুও ওই হরিণদের নিয়েই দুশ্চিন্তা তাবৎ দণ্ডহিড়ের। জঙ্গলের জীব, জঙ্গলেই থাকুকএমনটাই চাইছেন দণ্ডহিড়। তাঁদের দাবি, পাহাড়ের উপরেই হরিণদের জন্য খাবার ও জলের ব্যবস্থা করুক বন দফতর। তাহলে এক দিকে যেমন বাঁচবে তাঁদের চাষের সব্জী, অন্য দিকে লোকালয়ে চলে আসা হরিণের উপর কুকুরের হামলার ঘটনাও এড়ানো যাবে। গ্রামবাসীদের দাবির যৌক্তিকতা মানলেও বন দফতরের কর্তাদের পাল্টা দাবি, পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবেই সে ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
বন দফতরের কাছে দণ্ডহিত ‘বন্যপ্রাণপ্রেমী’ গ্রাম হিসাবে পরিচিতি। বন দফতর জানিয়েছে, এই গ্রাম লাগোয়া পাহাড়ের জঙ্গলে ৪৫-৫০টি চিতল হরিণ রয়েছে। গত তিন-চার বছরে ওই গ্রামের বাসিন্দারা উদ্ধার করেছেন পাঁচটি চিতল হরিণ। তার মধ্যে তিনটিকে চিকিৎসা করে বাঁচানো গিয়েছে। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরীর কথায়, “দণ্ডহিত গ্রামে নেমে এসে ফসল নষ্ট করলেও গ্রামবাসীরা হরিণগুলিকে বরাবর বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের সাহায্য না পেলে ওই হরিণগুলিকে বাঁচানো যেন না।”.
গ্রামের বাসিন্দা তথা বনরক্ষা কমিটির সদস্য ধনঞ্জয় মাল, কৃষ্ণপদ দে, ভজহরি খন্না, শ্রীদাম নন্দীদের অভিযোগ, “হরিণগুলি নেমে এসে আমাদের মাঠের ফসল নষ্ট করছে। কুকুরের হামলা মারাও যাচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ের উপরেই ওদের জন্য জল ও খাবারের উপযোগী ফল-ফসলের গাছ বসিয়ে দিলে এ সব বন্ধ হবে।” ইতিমধ্যেই তাঁরা বন দফতরের কাছে পাহাড়ে হরিণদের খাবারের ও কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব গণস্বাক্ষর করে জমা দিয়েছেন। কিন্তু ওদিক থেকে সাড়া মেলেনি।
বন দফতর জানিয়েছে, রঘুনাথপুর রেঞ্জ অফিস থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রামবাসীদের দাবি পাঠানো হয়েছে। এক বনাধিকারিক বলেন, “ওই পাহাড়ের উপরে রয়েছে শাল জঙ্গল। কিন্তু হরিণের শালপাতা পছন্দ নয়। তাই হরিণদের খাবারের জন্য ওই জঙ্গলে নলঘাস, ভুট্টা, বাঁশগাছ লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের উপরে ৫০টি ছোট্ট বাঁধানো জলাশয় তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “ওই ছোট্ট জলাশয়ে খনিজ লবন ও গুড় মিশিয়ে দিলে, তা হরিণরা বেশ পছন্দ করে। জঙ্গলেই প্রয়োজনীয় খাবার ও জল পেলে হরিণরা নীচে নামবে না। বাঁচবে গ্রামবাসীদের ফসলও।” তিনি জানান, পাহাড়ের নীচে কাঁটা তার দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এ সব রূপায়ণের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন।
পুরুলিয়ার ডিএফও (কংসাবতী উত্তর) সোমা দাস বলেন, “দণ্ডহিত গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা জানি। আমরাও চেষ্টাও করছি। কিন্তু তহবিলের অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না।” তাঁর আশ্বাস, “দণ্ডহিত গ্রামের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। আগামী অর্থবর্ষে জেলা প্রশাসনের কাছে অর্থ চেয়ে প্রস্তাব দেব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.