বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে অকারণে পলাশ ফুল নষ্ট করা শান্তিনিকেতনের পরিচিত দৃশ্য। এ বারে সেই প্রবণতা রুখতে কড়া হচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
জোর করে আবির মাখানো, পলাশ ফুল নষ্ট করা এবং প্লাস্টিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি আটকাতে ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর কর্মসচিব ডি গুণশেখরণ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। দোলের সময় মহিলা বা ছাত্রীদের কোনও রকমের হেনস্থার চেষ্টা হলে অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর মুখপাত্র অমৃত সেন বলেন, “কর্মসচিব একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। কাউকে জোর করে আবির মাখানো যাবে না। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য মেনে কোনও রকমের তরল রং ব্যবহার করা যাবে না। পলাশ ফুল অপচয় করা থেকেও মানুষকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ছাত্রী ও মহিলাদের প্রতি কোনও রকমের খারাপ ব্যবহার বিশ্বভারতী বরদাস্ত করবে না। সে ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা নেবে।” |
বসন্ত উৎসবের একদিন আগে থেকেই গাছের পলাশ ফুল পেড়ে নষ্ট করায় মাততে দেখা যায় ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে বহিরাগতদের একটা বড় অংশকে। ওই সময় এলাকার প্রায় একটি গাছেও আর পলাশ দেখা যায় না। সবই পেড়ে নেওয়া হয়। আবার ফুল পাড়তে গিয়ে অনেক সময়ই ক্ষতি হয় গাছেরও। তাই উৎসব চলাকালীন সুস্থ পরিবেশ বজার রাখা-সহ পলাশ ‘নিধন’ আটকাতে বারবার সরব হয়েছেন এলাকার পরিবেশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অতীতে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে আশ্রম এলাকায় মিছিলে পা মিলিয়েছেন যোগেন চৌধুরী মতো বিশিষ্ট জনেরাও। তাই সুশৃঙ্খল ভাবে বসন্ত উৎসব করতে এ বার বিশেষ সচেষ্ট হয়েছে বিশ্বভারতী। ইতিমধ্যেই সচেতনা বাড়াতে বিজ্ঞপ্তিতে থাকা বিষয়গুলি নিয়ে আশ্রম এলাকায় প্রচার শুরু করেছেন কর্মী, অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারও দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতীর মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক ইউ পি সিংহ জানিয়েছেন, পলাশ ফুল বিক্রি করা আটকাতে উৎসবের একদিন আগে থেকেই একটি পরিদর্শক দল বিভিন্ন এলাকা ঘুরবে। এমনকী সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের কাছেও তাঁরা আবেদন করেছেন, বসন্ত উৎসবের মূল অনুষ্ঠানে যাঁরা যোগ দেবেন তাঁরাও যেন পলাশ ফুল ব্যবহার না করেন। সব মিলিয়ে শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে ‘সবুজ শান্তিনিকেতন, পরিস্কার শান্তিনিকেতন’ স্লোগানকে তুলে ধরতে চাইছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের নির্দেশে দিন চারেক আগেই এ নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের একটি বৈঠক হয়েছে। উৎসবের দিনগুলিতে যাতে গণ্ডগোল না হয়, তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে বিশ্বভারতী। যান নিয়ন্ত্রণ করতে সুষ্ঠু পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা-সহ নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। |