প্রথমে বক্সা-র জঙ্গল ছেড়ে তারা গিয়েছিল দার্জিলিঙের সেঞ্চলে। কিন্তু সেখানেও টিঁকতে পারছে তারা। তাই লাল পান্ডা, মোনাল ফেজান্টের মতো প্রাণীরা সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্কে উঠে গিয়েছে বলে বন দফতরের অফিসার ও পরিবেশবিদদের একাংশ জানিয়েছেন। কেন এই অবস্থা?
ওই পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্রমাগত তাপমাত্রা বাড়ছে। আর সেই কারণেই শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রাণীরা পাহাড়ে আরও উঁচু এলাকার দিকে সরে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব অরণ্য দিবস উপলক্ষে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের এক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন বনকর্তা ও পরিবেশবিদ প্রণবেশ সান্যাল বলেন, “শুধু ভারত নয়, অস্ট্রেলিয়াতেও এই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছে। সেখানে উঁচু পাহাড় না থাকার কারণে কোয়ালা-সহ বেশ কয়েক ধরনের প্রাণী বিপন্ন হয়ে পড়েছে।” পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সুন্দরবনে মাটি ও জল-ও লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। সমস্যা হচ্ছে বাঘ ও অন্যান্য প্রাণীদের। প্রণবেশবাবু জানান, লবণাক্ত জলের কারণেই বাঘ ইদানীং লোকালয়ে সরে আসছে। |
যদিও বনকর্তাদের একটি অংশ পুরোপুরি এই ধরনের যুক্তি মানতে নারাজ। রাজ্য বন দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “এটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু কোনও সমীক্ষার আগে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।” হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কর্তা অনিমেষ বসুও বলছেন, “সিঙ্গালিলা থেকে নীচু এলাকাতেও পান্ডা দেখা গিয়েছে।” অনিমেষবাবু বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। যার ফলে অনেক পাহাড়ি ফুল নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফুটে যাচ্ছে। তার জেরে ফুলের উপর নির্ভরশীল পোকা ও পাখিদের জীবনচক্রে পরিবর্তন আসছে। পাহাড়ে চাষের খেতে অজানা আগাছা ও পোকার সংখ্যা বৃদ্ধিও লক্ষ্য করেছেন অনিমেষবাবুরা।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহার বক্তব্য, “সুন্দরবনের বাঘ নোনা জল-হাওয়ায় অভ্যস্ত। ফলে লবণের পরিমাণ বাড়লে তাঁর খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” তাঁর যুক্তি, বিশ্ব উষ্ণায়নে সুন্দরবনের মাটি-জলে লবণের পরিমাণ বাড়লে গাছের ক্ষতি হয়। এ ভাবেই সুন্দরবন থেকে সুন্দরী, গোলপাতা গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব? পরিবেশবিদদের দাবি, বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে গেলে গাছ লাগানোর উপরে জোর দিতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটার উপরেও লাগাম টানা জরুরি বলে তাঁরা জানান। পাশাপাশি বাড়াতে হবে সামাজিক বনসৃজন। বিভিন্ন পতিত জমিকেও এই ভাবে গাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বনকর্তারা জানিয়েছেন। অতনুবাবু বলছেন, পরিবেশের ৪০% কার্বন বনাঞ্চলে সঞ্চিত থাকে। নির্বিচারে গাছ কাটলে সেই কার্বন পরিবেশ বা আবহাওয়ায় ফিরে যাবে। তিনি বলেন, “উন্নয়নের ফলে মূল অরণ্য আর বাড়ানোর উপায় নেই। তাই সামাজিক বনসৃজনের মতো পদ্ধতিই সব থেকে উপযোগী। ”
দেশের বনাঞ্চলের ছবিটাও তুলে ধরে প্রণবেশবাবু জানান, দেশের মোট আয়তনের ২১% বনাঞ্চল রয়েছে। তা স্বাভাবিক করতে গেলে ৩৩ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। পরিবেশবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বনাঞ্চলের হার আরও কম। মোট আয়তনের ১৩.৬%। যদিও রাজ্য বন দফতরের এক কর্তা বলছেন, “১৩.৬% জঙ্গল এলাকা। এর বাইরে যে গাছ লাগানো রয়েছে, তা যোগ করলে মোট পরিমাণ ১৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছবে।” |