আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুড়শুড়ার শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের দীনবন্ধু পাকিরার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেন বিডিও সম্রাট মণ্ডল।
ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, গোলমালের সূত্রপাত মাস সাতেক আগে। স্থানীয় ধাপধাড়া গ্রামে একশো দিনের প্রকল্পে একটি পুকুর সংস্কারের কাজে বেশি মাটি কাটা পড়ায় পাশের দু’টি পাকা বাড়ি হেলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাড়ির লোকজন ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। প্রধান তড়িঘড়ি টেন্ডার না ডেকেই কংক্রিটের গাঁথনি করে বাড়ি দু’টিকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন। সে সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য স্থানীয় মানুষের সাধুবাদ পেলেও কেন টেন্ডার ডেকে কাজ করানো হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। অভিযোগ জানানো হয় ব্লকে।
এই পঞ্চায়েত এলাকার ৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কাজগুলি করানোর দায়িত্ব নেন। কিন্তু সেই সব নির্মাণের ক্ষেত্রেও হিসেবে গরমিল আছে বলে জানায় প্রশাসন। সিপিএমের পুড়শুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুখেন্দু অধিকারী বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের চাপে অনেক কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধান। সেই কাজে অনিয়ম থাকলে, তা পরিকল্পিত ভাবেই করানো হয়েছে। গোটা মহকুমার বাম পরিচালিত সব পঞ্চায়েত প্রধানই এই আশঙ্কায় আছেন।” এ ব্যাপারে তৃণমূলের পুড়শুড়া ব্লক সভাপতি জয়দেব জানা বলেন, “প্রধানের শাস্তির পাশাপাশি ওই সব অন্যায়ের সঙ্গে আমাদের কেউ যুক্ত থাকলে সে ক্ষেত্রেও তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
দীনবন্ধুবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, গত দেড় বছর ধরে প্রধানকে কার্যত শিখণ্ডী খাড়া করে তৃণমূল নানা কাণ্ড-কারখানা ঘটাচ্ছে।
উপপ্রধান-সহ অন্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যেরা যখন অনেক সময় দফতরেই আসেন না, সেখানে প্রধান নিয়মিত হাজির থেকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও গত তিন দিন ধরে প্রধানও আসছেন না। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে নিয়মিত পরিষেবার ক্ষেত্রে।
দীনবন্ধবাবুর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিডিও। তিনি বলেন, “আর্থিক নিয়ম না মানা ছাড়াও টেন্ডার ডাকার পদ্ধতি মানা হয়নি। একশো দিনের কাজে মজুরি দেওয়া নিয়েও গোলমাল আছে। প্রধানকে কিছু দিন আগে শো-কজ করা হয়েছিল। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় মহকুমাশাসকের নির্দেশে এফআইআর করা হয়েছে।” মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের কথায়, “হিসেবে গরমিল থাকায় পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা হয়েছে।” পুলিশ জানায়, প্রধান পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে।
টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দীনবন্ধুবাবু বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম যে করিনি, তা তৃণমূলের নেতারাও জানেন। নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যেরা কেউ না আসায় তৃণমূলের সঙ্গে পরামর্শ করেই গ্রামোন্নয়নের সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। টাকা খরচও হয়েছে সে ভাবে। টেন্ডার ডাকার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা কিন্তু বিডিওর সঙ্গে মৌখিক ভাবে কথা বলে বা দলমত নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই করা হয়েছে।” অযথা বিলম্ব এড়াতেই তেমন পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন দীনবন্ধুবাবু। |