প্রেসিডেন্সির জন্য নিজেদের নিয়মই ভেঙে দিল রাজ্য সরকার!
রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনেট-সিন্ডিকেট কিংবা কোর্ট-কাউন্সিলে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটিগুলি থেকে ছাত্র-প্রতিনিধি বাদ দেওয়া হলেও প্রেসিডেন্সির বেলায় নিয়মের ব্যতিক্রম হল। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা হবে পরিচালন পর্ষদ। আর সেই পরিচালন পর্ষদে থাকবেন ছাত্র সংসদের এক জন প্রতিনিধি।
বিলে বলা হয়েছে, ওই ছাত্র প্রতিনিধিকে উপাচার্য মনোনয়ন করবেন এবং পরিচালন পর্ষদের সভায় তাঁর ভোটাধিকার থাকবে না। কিন্তু প্রেসিডেন্সির জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজ্যের এক অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধবে।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এক সময় রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে-সব উপায় অবলম্বন করত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিতে নির্বাচিত ছাত্র-প্রতিনিধি রাখা তার অন্যতম বলে মনে করেন অনেকেই। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকারও তা-ই বলেছিল। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করে সরকার। বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি-মুক্ত করার জন্যই সরকারের এই প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থায় ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব না-রাখাটাও সেই প্রয়াসেরই অঙ্গ বলে সরকারি তরফে তখন ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
তা হলে প্রেসিডেন্সির বেলায় হঠাৎ এমন ব্যতিক্রম কেন?
এ রাজ্যে ছাত্র নির্বাচন মানে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র তারই প্রমাণ ভূরি ভূরি। ছাত্র সংসদ গড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি এখনও যে-ধারা অনুসরণ করছে, তাতে রাজনৈতিক রেষারেষি বহাল থাকছেই। প্রেসিডেন্সির পরিচালন পর্ষদে যিনি ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি হবেন, তিনি উপাচার্য-মনোনীত। এমনও বলা রয়েছে যে, ওই ছাত্র-প্রতিনিধির উপস্থিতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থকে কোনও ভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে হলে তাঁকে বৈঠকে যোগ দেওয়া থেকে বিরত করা হবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্সিরই প্রবীণ শিক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ছাত্র সংসদ যদি নির্বাচিত হয়, তা হলে তাদের কোন প্রতিনিধি পরিচালন পর্ষদে যাবেন, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে উপাচার্যের ক্ষমতা কার্যক্ষেত্রে খুবই সীমিত হবে। এমনকী বৈঠকে যোগ দেওয়া থেকে সেই প্রতিনিধিকে বিরত রাখাও কঠিন হবে। কর্তৃপক্ষ সেই চেষ্টা করলে ক্যাম্পাসে অশান্তি বাড়বে।
রাজ্যেরই অন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনে করেন, সরকার অযথা জটিলতা তৈরি করছে। তাঁরও ধারণা, প্রেসিডেন্সির জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত অন্য সব ক্যাম্পাসে অসন্তোষ তৈরি করবে।
কিন্তু রাজ্য সরকার হঠাৎ প্রেসিডেন্সির ছাত্রদের অন্য চোখে দেখতে গেল কেন? এর ব্যাখ্যা সরকারের তরফে পাওয়া যায়নি।
এই বিল পাশ হওয়ার সুবাদেই প্রেসিডেন্সিতে মেন্টর গ্রুপ স্থায়িত্ব পাচ্ছে। এক জন চেয়ারপার্সন-সহ সর্বোচ্চ ন’জন সদস্যের মেন্টর গ্রুপ গড়বে রাজ্য সরকার। তার মেয়াদ হবে দু’বছর। সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সুপারিশ করবে মেন্টর গ্রুপ। যেগুলি গ্রহণযোগ্য মনে হবে, রাজ্য সরকার পরিচালন পর্ষদকে সেগুলি কার্যকর করতে বলবে। মেন্টর গ্রুপের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও মতপার্থক্য হলে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রেসিডেন্সিতে বর্তমানে অধ্যাপক সুগত বসুর নেতৃত্বাধীন মেন্টর গ্রুপ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন জানান, এই মেন্টর গ্রুপের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হবে। |