কাউন্সিলর হতেই দ্রুত ভরল শম্ভুনাথের ঝুলি
ছর কুড়ি আগেও ধাপা থেকে বাতিল প্লাস্টিক, লোহালক্কড় কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। কলকাতা পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হওয়ার আগে ট্যাংরার ছাঁট চামড়া কেনাবেচা, পরে বাইপাসের ধারের জমির দালালি করে সাত ভাইয়ের যৌথ পরিবারকে তিনি কিছুটা সচ্ছলতার মুখ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার অধিকাংশ লোকজনের অভিযোগ, কাউন্সিলর শম্ভুনাথ ওরফে লালু কাওয়ের ‘লাইফ স্টাইল’ গত তিন বছরে আমূল বদলে গিয়েছে। আরও অভিযোগ, লালু কাও এখন নামেবেনামে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক!
বাইপাস সংলগ্ন ধাপা রোড, মহিষতলা, হাজরা বাগান, ঢিপি, দুর্গাপুর, সায়দাবাদ, অনন্তবাদালের মতো এলাকার অনেক বাসিন্দা এখন অভিযোগ করছেন, শম্ভুনাথের অ্যাসবেসটসের চাল দেওয়া বাড়িটি এখন দামি মার্বেল বসানো, তিনতলা উঁচু। নামেবেনামে তাঁর একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে।
বুধবারের গোলমালের পর থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি শম্ভুনাথের। তাঁর পরিবারের থেকেও জানা যায়নি, ফেরার পুরপিতা এখন কোথায়। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সদর দরজা বন্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে পরপর অভিযোগ উঠলেও শম্ভুনাথ বা তাঁর পরিবারের তরফে কোনও বক্তব্য মেলেনি। তবে খুনে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের নানা দুষ্কর্মের অভিযোগে এ দিনও রীতিমতো সরব তাঁর এলাকা।
শম্ভুনাথ কাও-এর বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ এ দিন জানায়, লালু কাও প্রথমে তাঁদের বলেছিলেন, ধাপা রোড চওড়া করা হবে বলে তাঁদের উঠে যেতে হবে। ওই ব্যবসায়ীরা তাঁকে প্রস্তাব দেন, নতুন শাকবাজার সংলগ্ন তিন বিঘা জমির একাংশে তাঁদের বসতে দেওয়া হোক। অভিযোগ, তাতে রাজি হননি লালু। ব্যবসায়ীরা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁকেই সমস্যার সমাধানের জন্য উদ্যোগী হতে বলেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, মেয়র আশ্বাস দিয়েছিলেন, ধাপা রোডের উল্টো দিকে বাইপাসের ধারে পুরসভার নিজস্ব জমিতে নতুন শাকবাজার তিনি গড়ে দেবেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নতুন এলাকা থেকে কয়েক লক্ষ তোলা তুলতে অসুবিধা হবে বলে মেয়রের প্রস্তাবে রাজি হয়নি কাউন্সিলর লালুর দলবল।
নিজেদের তৃণমূলকর্মী বলে দাবি করে এলাকার কয়েক জন ছোট ঠিকাদার বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের যে ‘সিন্ডিকেট’ লালু কাও তৈরি করেছিলেন, তার একমাত্র কাজ ছিল বেশি টাকায় এবং নির্দিষ্ট একটি সংস্থার কাছ থেকে জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া। সুরেন্দ্র সিংহ, বাচ্চু, চিরঞ্জিৎ মালিক, লবা, ভলকু নামে স্থানীয় কয়েক জন যুবকের পরামর্শে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন লালু। তৃণমূল নেতা অধীর মাইতি খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, শম্ভুনাথের সঙ্গে যে আট জনের নামে এফআইআর হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও দুষ্কর্মের একাধিক অভিযোগ আছে। তাদের দিয়েই ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে গরিব কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শম্ভুনাথের হয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় করত তারাই।
৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে কলকাতা পুরসভার বেশ কিছু জমি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই জমিতে কাঠা পিছু দখলদার বসানোর দর বেঁধে দিয়েছে লালু কাওয়ের ছেলেরা। দখল নেওয়া জমিতে দরমার বাড়ি তৈরি করে বাস করছেন বাসন্তীর এক যুবক। তিনি দাবি করেন, “আমার কাছ থেকে এক কাঠা জমির জন্য ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।”
তোলা-কাহিনি (মাসে)
নতুন শাকবাজার (পাইকারি সব্জি) থেকে: ৩ লক্ষ
শাকবাজারে গাড়ি পার্কিং থেকে: ৮০ হাজার
৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেট: ৮ লক্ষ
চায়না-টাউনের রেস্তোরাঁগুলি থেকে: ২ লক্ষ
ধাপায় কলকাতা পুরসভার জমিতে দখলদার বসিয়ে: ২ লক্ষ
ওয়ার্ডে বাড়ি মেরামতি বা নতুন নির্মাণ থেকে: ৭ লক্ষ
আরুপোতায় গাড়ির শোরুমগুলি থেকে: ১ লক্ষ
পুরসভার জমিতে অবৈধ গ্যারাজ থেকে: ৫০ হাজার
মোট: ২৪.৩ লক্ষ
(সব অঙ্ক টাকায়) *স্থানীয় অভিযোগের ভিত্তিতে
চায়না-টাউনের বেশির ভাগটাই ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সেখানকার এক রেস্তোরাঁ-মালিকের অভিযোগ, বিশ বছর ধরে এই ওয়ার্ডে যাঁরাই কাউন্সিলর হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই অবৈধ রোজগারের অধিকাংশ মিটিয়েছেন ওই হোটেল মালিকেরা। তাঁর দাবি, সেই ‘ট্র্যাডিশন’-এর কোনও পরিবর্তন হয়নি শম্ভুনাথের জমানায়।
পুলিশ জানায়, অধীর মাইতি খুনে এফআইআরে নাম থাকা অনেকেই ধরা পড়েনি বৃহস্পতিবারেও। কলকাতা পুলিশ জানায়, পলাতকদের মোবাইলর টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখে তাদের খোঁজ চালানো হচ্ছে। এ দিন ট্যাংরার কামারডাঙা রেল আবাসনের কাছ থেকে একটি বিদেশি গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। পুলিশের অনুমান, গাড়িটি শম্ভুনাথের। তার ভিতরে একটি কালো ব্যাগ এবং বেশ কিছু ফাইল ছিল। গাড়িটি প্রগতি ময়দান থানায় রাখা আছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “গাড়িটি শম্ভুনাথ কাওয়ের বলেই অনুমান করা হচ্ছে। গাড়ির চালক চিমা নামে এক যুবক। সে-ও পলাতক।”
ওই খুনের ঘটনায় ধৃত পেটকাটা বাবলুকে এ দিন আলিপুর পুলিশ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিচারক তাকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.