|
|
|
|
সরকারি আলুর জন্য জায়গা রাখার নির্দেশ হিমঘরকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান ও হুগলি |
সহায়ক মূল্যে যে আলু কেনা হচ্ছে তা রাখার জন্য হিমঘরগুলিকে শতকরা ২০ ভাগ জায়গা ফাঁকা রাখতে বলছে রাজ্য সরকার। যদিও সব জায়গায় সরকার এখনও আলু কিনতে নামেনি। হিমঘর মালিকদেরও অনেকে গাঁইগুঁই করছেন। আলু কেনার বিষয়ে সরকারের কতটা সদিচ্ছা আছে, তা নিয়েও ঠারেঠোরে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
মরসুমের শুরুতে নতুন আলু উঠতেই খোলা বাজারে দাম পড়তে শুরু করেছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকে হুগলিতে আলু কেনা শুরু করেছে কৃষি বিপণন দফতর। তবে বর্ধমান, মেদিনীপুর বা উত্তরবঙ্গে এখনও তা শুরু হয়নি। এর মধ্যেই বুধবার হিমঘর সংক্রান্ত নির্দেশিকা এসে পৌঁছেছে। বর্ধমানে দফতরের এক আধিকারিক জানান, দফতরের অধিকর্তার জারি করা ওই নির্দেশে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা না থাকলেও হিমঘরগুলির জায়গা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। যে সব বছরে অতিফলন হয় বা হিমঘরে আলু রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, সেই সব বছরেই সরকার স্থান সংরক্ষণের নির্দেশিকা জারি করে। |
|
বর্ধমানের হলদি গ্রামে খোলা মাঠে পড়ে রয়েছে আলু। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু হিমঘরে খোঁজ নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন সরকারি অফিসারেরা। বর্ধমানের এক কৃষি বিপণন আধিকারিকের কথায়, “হিমঘরগুলি জানিয়েছে, আগে থেকে নির্দেশ না পাওয়ায় কোনও জায়গা খালি রাখা হয়নি। প্রায় ৬০ শতাংশ হিমঘরেরই সমস্ত জায়গা ভরে গিয়েছে আলু রাখতে গিয়ে। ফলে সরকারের কেনা আলু কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।” মেমারির হিমঘরের মালিক রমেশ হাজরা বলেন, “বর্ধমান জেলায় যে ১০৬টি হিমঘর রয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশের জায়গা ভরে গিয়েছে। সরকার আগে জানালে হয়তো জায়গা রাখা যেত।” মঙ্গলকোটের এক হিমঘর মালিকের দাবি, “চাষিরা একরকম জোর করে হিমঘরে আলু ভরে দিচ্ছেন। তাই ফাঁকা জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। ২০১১ সালে সরকার হিমঘরে যে আলু রেখেছিল, তার ভাড়া এখনও মেটায়নি। কোন ভরসায় সরকারের জন্য জায়গা ফেলে রাখব?”
হুগলির হিমঘর মালিক সংগঠনের অন্যতম কর্তা পতিতপাবন দে বলেন, “অনেক মালিক ইতিমধ্যেই আলু বোঝাই করে হিমঘরে তালা দিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে নতুন করে জায়গা বের করা সম্ভব নয়।” কিছু জেলার কৃষি বিপণন দফতর অবশ্য মনে করছে, হিমঘর মালিকেরা ইচ্ছা করে অসহযোগিতা করছেন। বিপুল পরিমাণ আলু যেখানে মাঠ থেকে ওঠেইনি, সেখানে হিমঘরগুলির সব জায়গা ভরে যেতে পারে না। হিমঘর মালিকেরা আবার বলছেন, শুধু বর্ধমানেরই সমস্ত হিমঘরের শতকরা ২০ ভাগ স্থান সংরক্ষিত করা হলে অন্তত আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আলু রাখা যাবে। তার দাম কয়েকশো কোটি টাকা। সরকার অত টাকার আলু কী করে কিনবে, সেখানেই আসল প্রশ্ন। হিমঘর মালিক রমেশবাবুর মতে, “শেষ মুহূর্তে এই নির্দেশে চাষিদের লাভ কিছুই হবে না। এ নির্দেশ শুধু হিমঘর মালিকদের সমস্যায় ফেলতেই জারি করা হয়েছে।” কী করে এই জট খুলবে, তা সরকারি অফিসারদের কাছেও পরিষ্কার নয়। কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “আসলে কোথায়, কবে, কতটা আলু কেনা হবে তা আগাম না জানিয়ে হঠাৎ এ রকম নির্দেশিকা জারি করাতেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।”
|
পুরনো খবর: সরাসরি আলু কিনতে মাঠে নামল রাজ্য সরকার |
|
|
|
|
|