রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতো সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু করল কৃষি বিপণন দফতর। বাজারে যেখানে পঞ্চাশ কেজির বস্তায় বড় জোর ১৮০ টাকা দর মিলছিল, সেখানে তা ২৫০ টাকায় কিনছে সরকার। দিচ্ছে পরিবহণ খরচও।
মঙ্গলবার হুগলির তারকেশ্বরে গিয়ে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা গিয়ে এই কাজের তদারকি করেন। পর্যায় ক্রমে রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও আলু কেনার কাজ শুরু হবে বলে দফতর সূত্রের খবর। সরকারি আধিকারিকদের কাছে আলু বিক্রি করার সঙ্গে-সঙ্গেই চাষিরা এ দিন হাতে-হাতে চেক পেয়ে যান।
কৃষি বিপণন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আলু বিক্রিতে চাষিদের সাড়া খুবই ভাল। রাজ্যের অন্যান্য জেলায় শীঘ্রই আলু কেনা শুরু হয়ে যাবে।” যদিও আলু উৎপাদনে এগিয়ে থাকা আর এক জেলা বর্ধমানে এখনও তেমন কোনও নির্দেশ আসেনি। |
আলুচাষির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে চেক। মঙ্গলবার তারকেশ্বরে ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর দে। |
মরসুমের শুরুতেই আলুর দাম হু-হু করে পড়তে থাকায় আলুচাষিরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একেবারে শুরুতে আলুর বাজার চাঙ্গা ছিল। জলদি আলু ৩০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি) দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু মার্চের শুরুতে হিমঘর খোলার পরেই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, চাষিরা ১৮০ টাকা বস্তা পিছু আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। বিভিন্ন মহলে দাবি ওঠে, সরকার চাষিদের পাশে দাঁড়াক। কারণ ওই দামে আলু বিক্রি করে চাষের খরচই উঠছে না চাষিদের। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার আলু কিনতে নামবে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এর জন্য মোট ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় রাজনৈতিক মহল অবশ্য এর পিছনে রাজনীতি দেখছে। তাদের যুক্তি, গত বছরের পরে এ বারও চাষিরা আলুর দাম না পেলে বিস্তীর্ণ এলাকায় হাহাকার পড়ে যাবে। তার প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই ঝুঁকি একেবারেই নিতে চায়নি রাজ্য সরকার। চাষিরা দাবি তুললেও রাজ্যের বিরোধী দলগুলি কিন্তু সেই ভাবে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার দাবিতে সোচ্চার হয়নি। তার আগেই সরকার আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। যদিও চাষিরা বলছেন, সরকার এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নিলে ভাল হত। কেননা দাম আরও কমতে পারে, এই আশঙ্কায় অনেক চাষি ইতিমধ্যে হিমঘর বা ব্যবসায়ীদের কাছে অভাবী বিক্রি করে ফেলেছেন।
এ দিন আলু বিক্রি করতে এসে তারকেশ্বরের রামনারায়ণপুরের বাসিন্দা গণেশচন্দ্র মান্না এবং ধীরেন সামন্তেরা বলেন,“সরকার আরও আগে এবং আরও বেশি বস্তা আলু কিনলে ভাল হত। কারণ চাষ এ বার ভাল হয়েছে। তাই আলুর উৎপাদন বেশি।” সরকারি আধিকারিকেরা এ দিন সর্বাধিক ২০ বস্তা করে আলু কেনেন। এক কুইন্ট্যাল অর্থাৎ দু’বস্তা আলুর দাম বাবদ ৫০০ টাকা এবং পরিবহণ খরচ বাবদ আরও ৫০ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বর্ধমান কৃষি বিপণন সূত্রের দাবি, সরকার আলু কিনতে নামবে এই ঘোষণার ফলে বাজারে আলুর দাম ৩৭০-৩৮০ টাকা কুইন্ট্যাল থেকে ৪৬০ টাকায় পৌঁছেছে। তবে এ দিন সন্ধ্যা তাঁরা আলু কেনা সরকারি নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি।
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে প্রতিটি মহকুমায় আলু ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের নিয়ে বসেছি। ব্যাঙ্কঋণ সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যা মেটানো হয়েছে। আলু ব্যবসায়ীরা আলু কিনতে শুরু করায় বাজার চাঙ্গাও হচ্ছে।”
বাম আমলে সহায়ক মূল্যে আলু কেনা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের বেশ কিছু লোককে গ্রেফতারও করা হয়। এ বার কৃষি বিপণন দফতর আলুচাষিদের হাতে-হাতে চেক দিয়ে দেওয়ায় তেমন সম্ভাবনা এড়ানো যাবে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। |