কলেবরে বাড়ছে। কিন্তু শিশু-দশা ঘুচছে না!
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সম্পর্কে দলেরই একাংশের মূল্যায়ন এখন এটাই।
বিজেপি-র সদস্য-তালিকা বলছে, গত এক বছরে দলে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী সদস্য বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০১১ সালে রাজ্য বিজেপি-তে ১১ হাজারের কিছু বেশি যুব সদস্য ছিলেন। ২০১২-য় সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ৭০৩। কিন্তু বহরে বাড়লেও দল জনমানসে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারছে না। সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও যুবসমাজ থেকে নতুন নেতা-নেত্রী খুব বেশি উঠে আসছেন না। ফলে নেতৃত্ব যতই দাবি করুন আশু ভবিষ্যতে রাজ্য রাজনীতির রাশ বিজেপি-র হাতে আসবে, দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা কিন্তু এখনই বিরাট কোনও উত্থান কল্পনা করতে পারছেন না।
বিজেপি মনে করে, রাজ্যবাসী যখন ধীরে ধীরে বর্তমান শাসকের উপরে আস্থা হারাচ্ছেন এবং প্রাক্তন শাসকের প্রতি আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না, তখন সেই শূন্য স্থানে পদ্ম ফুল ফোটানোর সুযোগ আছে। সাম্প্রতিক কালে তাদের দলে সদস্য বেড়েওছে। কখনও কখনও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম, কংগ্রেস বা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের ঘটনাও ঘটছে। ওই ঘটনাগুলিকে দলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইশারা হিসাবে দেখাতে চাইছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ কলকাতায় এসে বলে গিয়েছেন, ২০১৬ সালের মধ্যে এ রাজ্যে বিজেপি-কে প্রথমে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে হবে।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল একমাত্র জঙ্গিপুর লোকসভার উপনির্বাচনে ৮.৪% ভোট বাড়ানো ছাড়া কোথাও বিজেপি হাতে গরম সাফল্য দেখাতে পারেনি। সাম্প্রতিক বিধানসভা উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র নলহাটিতে তাদের ভোট বেড়েছে। তা-ও মাত্র .৩৪%! বাকি দুই কেন্দ্র ইংরেজবাজার ও রেজিনগরে বিজেপি-র ভোট কমেছে। গত এক বছরে বিজেপি গোটা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮০টি কর্মসূচি নিয়েছে। দলের যুব মোর্চার সভাপতি অমিতাভ রায়ের দাবি, “প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বিপুল সংখ্যায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।” কিন্তু কলকাতায় অন্তত সাম্প্রতিক কালে বিজেপি-র কোনও কর্মসূচিতে তারুণ্যের ঢল চোখে পড়েনি।
দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “আমাদের যুব সদস্য বেড়েছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে। কলকাতার যুব সমাজ বিজেপি-তে আকৃষ্ট হচ্ছে, এ কথা বলা যাবে না।” ওই নেতার ব্যাখ্যা, “আমাদের দলের ছাত্র সংগঠন নেই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ আরএসএসের শাখা সংগঠন এবং কলকাতায় খুব সামান্য কলেজে তাদের যৎসামান্য প্রভাব আছে। কিন্তু তারা ছাত্রছাত্রীদের বিজেপি-র দিকে টানার চেষ্টা করে না। কলকাতায় বিজেপি-র যুব সদস্য না-বাড়ার এটা একটা বড় কারণ।” বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে বিজেপি করানো আমাদের কাজ নয়। তবে তার জন্য কলকাতায় বিজেপি-তে যুব সদস্য বাড়ছে না, তা মনে করি না।”
বিজেপি-র প্রথম সারির নেতা তথাগত রায়ের বক্তব্য, যুব সদস্য বাড়লেও ভোটে তার প্রতিফলন না ঘটার মূলত চারটি কারণ আছে। এক, রাজ্য রাজনীতিতে সিপিএম এবং সিপিএম বিরোধী এই মেরুকরণ। দুই, বরাবর যারা জয়ী, মানুষের তাদের পক্ষে থাকার প্রবণতা। তিন, সাম্প্রদায়িক তকমা। চার, জেলায় কোথাও কোথাও সাংগঠনিক শক্তি বেশি থাকলেও কলকাতায় দুর্বল হওয়ায় প্রচার না-পাওয়া। তথাগতবাবুর কথায়, “মেরুকরণের সমস্যাটা এ বার কাটবে। কিন্তু মানুষ যদি ভাবেন, বিজেপি জেতে না, তাই তাদের ভোট দেব না, তা হলে তো কোনও দিনই জিতব না! এ নিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে তাঁদের আস্থা আর্জন করতে হবে।”
যুব নেতৃত্ব নিয়ে এই সঙ্কটের পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য মুখের অভাবও বিজেপি-কে ভোগাচ্ছে। বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ, অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলের কোচ অমল দত্ত, প্রাক্তন ফুটবলার শ্যাম থাপা, মেয়োলাল এঁরা একদা বিজেপি-তে যুক্ত হলেও এখন আর সক্রিয় নন। তাই বিশিষ্টদের টানতে দলের নতুন ‘ইনটেলেকচুয়াল সেল’ খুলেছেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “বিশিষ্টদের পেলে রাজ্যবাসীর কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সে জন্যই ওই সেল খোলা হয়েছে।” |