চাবুকেও পরোয়া নেই! মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক সত্ত্বেও বিধানসভা অধিবেশনে হাজির থাকার ব্যাপারে তৃণমূল বিধায়কদের অনীহা কাটছে না!
অধিবেশন চলাকালীন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিধানসভা কক্ষে থাকতে হবে বলে গত শুক্রবার দলীয় বিধায়ক-মন্ত্রীদের হুকুম দেন মুখ্যমন্ত্রী। দলনেত্রীর নামেই হুইপ জারি হয়েছিল তৃণমূল পরিষদীয় দলে। তার পরে সোম-মঙ্গলবারেও ট্রেজারি বেঞ্চের ছবি বিশেষ বদলায়নি! ছিলেন ৪৫ থেকে ৫০ জন বিধায়ক! বেলা যত গড়ায়, ট্রেজারি বেঞ্চ তত ফাঁকা হয়! অধিকাংশ মন্ত্রী-বিধায়ক সময় কাটাচ্ছেন অন্য মন্ত্রীদের ঘরে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন নিজের কাজে।
শাসক দলের কেউ যে কথা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না, তা অবশ্য তৃণমূল তথা দলনেত্রীর পক্ষেই অস্বস্তিকর। হুইপ জারি হয়েছে যাঁর নামে, তিনিই অধিবেশন চলাকালীন ব্যস্ত থাকছেন জেলা-সফরে! হুইপ জারি করতে বলেছিলেন জলপাইগুড়ি থেকে ফিরে। হুইপ জারি হওয়ার পরে চলে গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ায়! তিনি ফিরে জবাব দেবেন বলে রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের মেয়াদ এক দিন বাড়ানো হয়েছে। এমতাবস্থায় তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্বই বা কোন মুখে বিধায়কদের লাগাম পরাবেন?
স্বভাবতই সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পড়েছেন বিপাকে। মমতার নির্দেশে হুইপ জারি করতে হয়েছিল তাঁকেই। কিন্তু তার পরেও তাঁর কাছে অনেক বিধায়ক-মন্ত্রীই সভায় থাকতে পারবেন না বলে কাকুতি মিনতি করছেন! কেউ কেউ আবার এসে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইছেন! ফাঁপরে পড়ে তখন শোভনদেবকে কঠোর মুখে বলতে শোনা গিয়েছে, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসুন!”
সোমবার দিনের বেশির ভাগ সময়টা বেশ কয়েক জন মন্ত্রী টানা সভায় থাকলেও বিধায়ক-আসনের অধিকাংশই ফাঁকা ছিল। সে দিন সন্ধ্যাতেই জঙ্গলমহল সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার মন্ত্রী আসনের বেশিটাই ফাঁকা ছিল। শিল্প ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও সভায় এসেছেন সভা শুরুর পরে। বিধায়কদের আসনও তথৈবচ। মহাকরণে যাবেন কি না, জানতে চাইলে এক মন্ত্রীর (সভায় না-থেকে নিজের ঘরে বসেছিলেন) বক্তব্য, “মহাকরণে যাব কী করে? এখন তো কড়া নির্দেশ, সভা চললে কোথাও যাওয়া যাবে না! একান্ত খুব প্রয়োজন থাকলে পরিষদীয় মন্ত্রীর অনুমতি নিতে হচ্ছে।” গত দু’দিনে শাসক শিবিরের উপস্থিতির বহর দেখে শোভনদেবকে এখন তালিকা রাখতে হচ্ছে, সওয়া ১১টার মধ্যে কে কে হাজির হচ্ছেন। গরহাজিরদের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হবে বলে মুখ্য সচেতকের দফতর সূত্রে খবর।
এ প্রসঙ্গে শোভনদেব বলেন, “ভাবছি আগামী অধিবেশন শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রীকে দলের সব বিধায়কের সঙ্গে বৈঠক করতে বলব। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সকলকে সভায় থাকার কথা বললে যদি কিছু কাজ হয়!” প্রতিদিন অধিবেশনের আগাগোড়া হাজির-থাকা শোভনদেব এ দিন সভার কাজ শেষ হওয়ার পরেই হাজরার মহারাষ্ট্র নিবাসে গিয়েছিলেন ‘যুবা’র কলকাতা জেলা সম্মেলনে। একই রাস্তা অনুসরণ করেছেন পার্থবাবু, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। |