পদ গিয়েছে চুরি!
পদ নিয়ে নানা খেয়োখেয়ি কংগ্রেস রাজনীতির দস্তুর। কিন্তু তা বলে একেবারে থানা-পুলিশ? তা-ও হচ্ছে কংগ্রেস-প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-তে।
দলেরই এক শ্রমিক নেতার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এ বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন আইএনটিইউসি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে! সংগঠনের মহাসচিব এম কামরুজ্জমান কামার মঙ্গলবার পার্ক স্ট্রিট থানায় ‘স্বঘোষিত শ্রমিক নেতা’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। কামারের কথায়, “আমাদের সংগঠনের নাম দিয়ে সংগঠন খুলে প্রতারণা হচ্ছে! কী করে চুপ করে বসে থাকব?”
অভিযোগের কেন্দ্রে দেবাশিস দত্ত। প্রদীপবাবুর ‘স্নেহধন্য’ হিসাবেই যাঁকে প্রদেশ কংগ্রেসের কিষাণ ও খেত মজদুর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি করা হয়েছিল। এখন তিনি কৃষক থেকে শ্রমিক নেতা বনেছেন! এবং রাতারাতি প্রদীপবাবুকেই আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতির পদ থেকে উৎখাত করে ছেড়েছেন! অন্তত দেবাশিসবাবুর দাবি তেমনই। আর সেই প্রচার ঠেকাতেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে প্রদীপবাবুদের সংগঠন। |
তৃণমূলের মহাসচিব ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি ও
সাংসদ সুব্রত বক্সীর সঙ্গে
সর্বভারতীয় যুবার সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র নিবাস হলে যুবার কলকাতা জেলার সম্মেলনে।—নিজস্ব চিত্র |
তবে এতে বিচলিত নন দেবাশিসবাবু। তাঁর কথা, “আমি নই, যাঁরা আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন, তাঁরাই বেআইনি কাজ করেছেন। সময় হলে আইনের রাস্তা ধরে আমিই ওঁদের থানায় ঢোকাব!” কিষাণ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে দেবাশিসবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রদীপবাবু জানান। কিন্তু দেবাশিসবাবুর দাবি, তিনি এখনও কিষাণ কংগ্রেসের সভাপতি পদে বহাল! তার সঙ্গেই আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়। খোদ আইএনটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতি সঞ্জীব রেড্ডি থেকে শুরু করে প্রদীপবাবু সকলেই সংগঠন থেকে বিতাড়িত বলেও প্রচার করছেন দেবাশিসবাবু!
দেবাশিসবাবুর নামে প্রতারণার অভিযোগ এনে কামরুজ্জামানের বক্তব্য, “আইএনটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতি থেকে শুরু করে রাজ্য সভাপতি ও পদাধিকারীরা স্ব স্ব পদে এখনও বহাল। কারণ আমাদের সংগঠনে পদাধিকারীরা নির্বাচনের মাধ্যমে নিযুক্ত হন। কিন্তু দেবাশিস যাঁর চিঠি দেখিয়ে রাজ্য সভাপতি হয়েছেন বলে প্রচার করছেন, তিনি হরিয়ানাবাসী প্রোমোটার অশোক চৌধুরী। যিনি নিজেকে আমাদের সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি বলে ঘোষণা করেছেন। এটা প্রতারণা!” মানতে নারাজ দেবাশিসবাবু। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কে সঞ্জীব রেড্ডি? ওঁকে রাহুল গাঁধীর নির্দেশে সংগঠন থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে! কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে উনি ন’বার ধর্মঘট করেছেন! ওঁকে আর সংগঠনে রাখা যায় নাকি?” দেবাশিসবাবুর হুমকি, “এক সপ্তাহের মধ্যে সব ফাঁস করে দেব!”
এ সব শুনে থ রেড্ডি! তাঁর মন্তব্য, “কী বলব! অশোক বিদ্রোহী আইএনটিইউসি! স্বঘোষিত সভাপতি! আমি নির্বাচিত সভাপতি। এখনও পদে বহাল আছি!” কামরুজ্জামান জানান, সংগঠনে এমন ঘটনা নতুন নয়। বীরভূমের এক প্রথম সারির কংগ্রেস নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুশান্ত সাঁতরা নামে এক ব্যক্তিও কিছু দিন আগে আইএনটিইউসি-র স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। তাঁকে থামাতেও কামরুজ্জামানদের পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। এ বারের অভিযোগ পেয়ে পার্ক স্ট্রিট থানার অফিসার-ইন-চার্জ মহম্মদ কলিমুদ্দিন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করব।” |