গভীর রাতে শহরের রাস্তায় মহিলাদের বেরনো নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুরনো বিতর্ককে ফের উস্কে দিলেন হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ।
বুধবার বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন অশোকবাবু। রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস, অনুন্নয়ন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রবীণ বিধায়ক এক সময় বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ধর্ষণ-ধর্ষণ বলে এত চিৎকার করছেন। কিন্তু বলুন তো, আপনার-আমার বাড়ির মেয়েরা কি রাত দুটোর সময় রাস্তায় ঘোরে?” এ নিয়ে বিরোধী পক্ষ থেকে হইচই শুরু হলে সরকারি দলের বিধায়কের কথা আর শোনা যায়নি।
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়াতেই সেটিকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার পর থেকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা ক্রমান্বয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেই চলেছেন। এ দিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অশোকবাবুর মন্তব্য বিরোধীদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিল। তাঁদের অভিযোগ, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে কটাক্ষ করে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই লঘ করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের মধ্যেও।
ঘটনার পরপরই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অভিযোগকারিণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, “যত দূর আমি জানি, মহিলা বিবাহবিচ্ছিন্না। আমার প্রশ্ন, এত রাতে তিনি নাইট ক্লাবে কী করছিলেন?” মদনের ওই মন্তব্য নিয়ে তখনই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সমালোচনায় মুখর হয় বিভিন্ন সংগঠন। সম্প্রতি তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নাট্য পরিচালক অর্পিতা ঘোষ দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার তফাৎ করতে গিয়ে বলেন, “দু’টি ঘটনার প্রেক্ষিত আলাদা। পার্ক স্ট্রিটের মহিলা মধ্যরাতে স্বেচ্ছায় কিছু অপরিচিত লোকের গাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন।” এর পরে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মন্তব্য নিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে রীতিমতো তদন্তের নির্দেশ দিতে হয়েছিল। কাকলি মন্তব্য করেছিলেন, “পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণ হয়নি। ওই মহিলা ও তাঁর খদ্দেরদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে সমস্যা হয়েছিল।”
রাজ্য মহিলা কমিশন অবশ্য অশোকবাবুর এ দিনের মন্তব্য নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চায়নি। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। বিষয়টিকে আর তেতো করে লাভ নেই। একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বিধায়কের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “বহু মেয়ে পেশাগত কারণে রাত করে বাড়ি ফেরেন। ট্রেন বা অন্য যানবাহনের গোলমালের জন্য পথে আটকে গিয়েও ফিরতে রাত হতে পারে। সেই সময়ে কোনও মহিলা যদি আক্রান্ত হন,
তা হলে সেটাও কি এ ভাবেই ব্যাখ্যা করা হবে?”
তবে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার অভিযোগকারিণী এদিন তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, “বিচার চলছে। সেই সময়ে এমন মন্তব্য করাটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যা বলার আদালতেই বলব।”
|