দুই পদে এক ব্যক্তি। জন্মলগ্ন থেকেই সরকারি নির্দেশে এমনই ব্যবস্থা চলে আসছে বিধাননগর মহকুমায়। বিধাননগরের মহকুমাশাসক এবং পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে সময় ভাগ করে কাজ করছেন একই ব্যক্তি। রাজ্যে এমন নজির আর নেই।
শুরু থেকেই রাজ্যের আর পাঁচটা মহকুমা থেকে বিধাননগরের সাধারণ প্রশাসন আলাদা। অন্য কোনও মহকুমায় এখনও পর্যন্ত পুরসভার কার্যনিবাহী আধিকারিকের পদে মহকুমা শাসককে বসানোও হয়নি। বিধাননগরে দু’টি পদে এক ব্যক্তি থাকার প্রশ্নে ভিন্নমত বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন (সিপিএম) এবং বর্তমান (তৃণমূল) কর্তারা। পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদার বলেছেন, “অভিজ্ঞতায় দেখেছি ওই দুই পদে একই ব্যক্তি থাকা ব্যঞ্ছনীয় নয়, এতে অনেক সমস্যাও হয়।” পুরসভার বর্তমান তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী অবশ্য স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “মহকুমাশাসক এবং পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক এক ব্যক্তি হওয়ায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না।”
সরকারি সূত্রের খবর, দুপুর একটা পর্যন্ত দফতরের কাজ করে মহকুমাশাসক চলে যাচ্ছেন বিধাননগর পুরভবনে, কার্যনির্বাহী আধিকারিকের দায়িত্ব সামলাতে। যার ফলে একটার পরে মহকুমাশাসকের দফতরে এসে তাঁর দেখা মিলছে না। ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। একই ভাবে দুপুর একটার আগে পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে নাগরিকদের।
বিধাননগর মহকুমাশাসককে পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বিধাননগরের পরিস্থিতি আলাদা। রাজ্যের আর পাঁচটা পুরসভার থেকে বিধাননগর সব দিক দিয়েই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্য পুরসভার তুলনায় বিধাননগর পুর-এলাকা ছোট। তাই প্রথম থেকেই এখানে মহকুমাশাসককে পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে রাজ্যের বর্তমান পুর ও নগরোন্নন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম জানান, বিধাননগর মহকুমাশাসক এবং পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক একই ব্যক্তি হওয়ায় কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে এখনও কেউ জানাননি। পুরমন্ত্রী বলেন, “বিধাননগর পুরসভা থেকে সমস্যার কথা তোলা হলে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।”
তৃণমূল ক্ষমতায় এসে বিধাননগর মহকুমাকে পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় এনেছে। কিন্তু এই মহকুমার সাধারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থার কোনও সংস্কার এখনও হয়নি। যা বেশি জরুরি ছিল বলে মনে করেন বাসিন্দাদের অনেকেই।
বিধাননগরে আবাসিকদের সংগঠন সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “একই ব্যক্তি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে থাকায় নাগরিকদের সমস্যা তো হচ্ছেই। দীর্ঘকাল ধরে এই ব্যবস্থা কেন চলছে, সেটাই আশ্চর্যের। দু’টি পদে একই ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ চালানোর বিষয়টি প্রশাসনিক না রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তা জানি না। তবে এটা বুঝি, কাজে গতি আনতে দু’টি পদে দু’জন অফিসার থাকা জরুরি।”
এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক তথা পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোড়া থেকেই সরকারি নির্দেশ মোতাবেক দু’টি পদে একই ব্যক্তি রয়েছেন। সরকারি নির্দেশেই আমি দু’টি পদের দায়িত্বে রয়েছি।” একইসঙ্গে মলয়বাবু জানান, দু’টি পদের দায়িত্ব সামলানোর জন্যই কাজের সময় ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। |