বাবা গার্ডেনরিচে পুলিশ-খুনে অভিযুক্ত।
মেয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুললেন সেই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত সিআইডি-র অফিসারদের বিরুদ্ধেই।
মদ্যপ অবস্থায় গোয়েন্দারা তাঁর বাবাকে জেরা করার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের অন্য দুই মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও মদন মিত্রের নামে গালিগালাজ করেছেন বলে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন ধৃত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার মেয়ে সাবা। বুধবার আলিপুর আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি।
গার্ডেনরিচে কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বরো চেয়ারম্যান মুন্নাকে এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি সাবা এবং অন্য আত্মীয়বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এজলাস থেকে বেরিয়েই সাবা অভিযোগের পর অভিযোগ করতে থাকেন। জানান, সিআইডি হেফাজতে তাঁর বাবার উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাবার সঙ্গে মিনিট দুয়েক কথা হল। উনি আমাকে বললেন, রাতে ঘুম থেকে তুলে মুখ্যমন্ত্রী, ববি হাকিম ও মদন মিত্রের নামে গালিগালাজ করছেন মদ্যপ তদন্তকারীরা। হুমকি দিয়ে আমার বাবাকে বলা হচ্ছে, কে তাঁকে বাঁচাবে!” সাবা-র আরও অভিযোগ, “বাবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁর খাবারে কখনও বেশি নুন, কখনও ঝাল দেওয়া হচ্ছে। যেগুলো খাওয়া ওঁর পুরোপুরি বারণ। ওষুধপত্রও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে।” সাবা-র প্রশ্ন, “বাবার সঙ্গে তো সিআইডি অফিসারদের কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তা হলে ওঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?” |
সিআইডি অবশ্য মুন্নার মেয়ের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের নামে মদ্যপ অবস্থায় গোয়েন্দাদের গালাগালির অভিযোগ প্রসঙ্গে সিআইডি-র স্পেশ্যাল আইজি বিনীত গোয়েলের বক্তব্য, “এ-রকম কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এই ব্যাপারে কেউ আমার কাছে কোনও অভিযোগও করেননি।” সেই সঙ্গে স্পেশ্যাল আইজি জানান, মুন্নার ডায়াবেটিসের কথা মাথায় রেখেই তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসককে দিয়ে নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হচ্ছে। সেই সব নথি জমাও দেওয়া হয়েছে আদালতে।
সিআইডি সূত্রের খবর, রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে জেরা তো দূরের কথা, মুন্নাকে দিনেও খুব অল্প সময়ই জেরা করা হচ্ছে। সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁকে রাতের খাবার দেওয়ার পরে কার্যত তাঁকে সে-দিন আর জেরাই করা
হচ্ছে না। তা হলে মুন্নার মেয়ে গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন কেন?
সিআইডি-র বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকার যাতে সিআইডি-র উপরে অসন্তুষ্ট হন, সেই মতলবেই মুন্নার মেয়ে ওই সমস্ত ‘উল্টোপাল্টা’ অভিযোগ এনেছেন। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “সিআইডি রাজ্য সরকারের অধীন। আর সেখানে সিআইডি অফিসারেরা তাঁদের হেফাজতে থাকা এক জন অভিযুক্তকে জেরার সময়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নামে গালিগালাজ করছেন, এর চেয়ে হাস্যকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কী হতে পারে!” সাবা মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া রাজ্য মন্ত্রিসভার যে-দুই সদস্যের নামে গালিগালাজ করার অভিযোগ এনেছেন, তাঁদের মধ্যে ববি হাকিম মুন্নার ঘনিষ্ঠ। ঘটনার শুরুতে তিনি মুন্নার পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন।
এ দিন বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ আদালতো তোলা হয় মুন্নাকে। গালে কয়েক দিনের না-কাটা সাদা দাড়ি। পরিচিতিদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে হাত নাড়েন তিনি। মেয়ে সাবা, ছোট ছেলে সইফ, বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা বাবলু করিমকে কাঠগড়ার পাশে দেখতে পেয়ে সে-দিকে এগিয়ে যান মুন্না। এজলাসে কয়েক মিনিটের জন্য ঢুকে মুন্নার সঙ্গে কথা বলেন তাঁর স্ত্রীও। মুন্নার সমর্থনে বন্দর এলাকা থেকে হাজার দেড়েক মানুষ এ দিন আদালত চত্বরে হাজির ছিলেন। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় মোতায়েন ছিল পুলিশ ও র্যাফ। আদালতের সামনে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে ভিড় জমিয়েছিলেন মুন্নার অনুগামীরা। ‘মুন্নাভাই বেকসুর হ্যায়’ স্লোগান ওঠে।
শুনানিতে অভিযুক্তের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদালতে তোলার পথে তদন্তকারীরা বিনা কারণে মুন্নার মুখ নোংরা কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছেন। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। পছন্দসই পোশাকও পরতে পারছেন না তিনি।” মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায় এই ব্যাপারে আদালতে লিখিত আবেদন পেশ করার নির্দেশ দেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে পুলিশ অফিসার খুনের মামলা ছাড়াও মুন্না দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধানোর মামলায় অভিযুক্ত। এ দিন হাঙ্গামা বাধানোর মামলায় অভিযুক্ত হিসেবেই মুন্নাকে সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সেই সঙ্গে তিনি জানান, খুনের মামলায় মুন্নাকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেল-হাজতে থাকতে হবে। |