নিজস্ব সংবাদদাতা • তেহট্ট |
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন। রয়েছেন অ্যানাসথেটিস্টও। অথচ গত প্রায় চোদ্দ মাস ধরে কোনও সিজারিয়ান প্রসব হচ্ছে না তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে। ফলে স্বাভাবিক প্রসব না হলেই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে প্রসূতিদের ছুটতে হচ্ছে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তিতে অবশ্য নির্বিকার স্বাস্থ্যকর্তারা। হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তথা সুপার সৈকত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘লেবার রুম ভেঙে এসএনএসইউ এর কাজ চলছে। তাই সিজার বন্ধ।’’ আর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদারের বক্তব্য, ‘‘ওখানে তো প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত অ্যানাসথেটিস্টই নেই। তাই সিজার হচ্ছে না।’’ চোদ্দ মাস ধরেই হাসপাতালের কাজ চলছে? এত দিনেও শেষ হল না সদ্যজাতদের চিকিত্সার জন্য তৈরি বিশেষ ইউনিটের কাজ? ফের কবে থেকে সিজার শুরু হবে? সদুত্তর নেই সুপার কিংবা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কারও কাছেই।
তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে সিজার চালু হয়েছিল ২০০৮ এর জুন থেকে। সেই থেকে ২০১২-র জানুয়ারি অবধি এখানে সিজারিয়ান প্রসব হয়েছে মাত্র ১০০টি। তার পর থেকে সিজার বন্ধ। ফলে সমস্যায় পড়ছেন দূরদুরান্তের প্রসূতিরা। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।
মাস খানেক আগে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে আসেন তেহট্টের দত্তপাড়ার মন্দিরা মোদক। কিন্তু হাসপাতালে এসেই তাঁকে শুনতে হয়, ‘‘এ তো সিজার কেস। এখানে তো হবে না।’’ এরপর তাঁকে রেফার করা হয় কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। তেহট্ট থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার পথ উজিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাঁর আর অস্ত্রোপচারের দরকারই হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রসব করেন তিনি। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এভাবে হয়রানির কোনও যুক্তি আছে?’’
তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে সিজার না হওয়ায় মন্দিরার মতো অনেককেই এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালে সিজার বন্ধ থাকাটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন চিকিত্সকরা। স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভবনা থাকলেও ‘ঝামেলা এড়াতে’ তাঁদের দাওয়াই সিজার করতে হবে। অন্য কোথাও নিয়ে যান। ফলে সেই মুহুর্তে প্রসূতিকে নিয়ে কৃষ্ণনগরে ছুটছেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
তেহট্ট থেকে জেলা সদর হাসপাতালের দূরত্বের পাশাপাশি রয়েছে বেহাল রাস্তার ধকলও। তারপরেও জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে কোনও প্রসূতিকে শুনতে হয়, ‘সিজারের দরকার নেই। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এখানে ‘রেফার’ করল কেন?’ কাউকে আবার শুনতে হয়, ‘দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।’ ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরকার হাজার ঢাকঢোল পেটালেও বাস্তব চিত্রটা কিন্তু রীতিমত উদ্বেগের। |