রক্ত সঙ্কটে ধুঁকছে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই পরিস্থিতি চলছে। রক্ত না পেয়ে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের পরিজনদের প্রতিদিন নাকাল হতে হচ্ছে। ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে রক্তদাতার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্তদাতা না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন। রক্তের সঙ্কটের জেরে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের কাজও ব্যহত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাঁচটি অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্তদান শিবির অনিয়মিত হয়ে পড়ায় এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট চলছে। রোগীদের ঠিক মতো রক্ত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীর পরিবারকে রক্তদাতা আনতে বলা হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে অনুরোধ করেছেন।
ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রক্ত সঙ্কটের সুযোগে হাসপাতাল চত্বরে দালালচক্র সক্রিয় হয়েছে। ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অনির্বাণ বেরা বলেন, “দালালচক্র রুখতে রোগীর পরিজনদের বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া রক্ত সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত হয়। কেউ ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে লিখিত ভাবে স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার আবেদন জানালে তবেই রক্ত সংগ্রহ করা হবে।” ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, প্রতি সপ্তাহে গড়ে যেখানে জেলার নানা এলাকায় ৫টি রক্তদান শিবির হয়, সেখানে গত এক সপ্তাহে একটিও শিবির হয়নি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে শেষ রক্তদান শিবির হয় গত ১০ মার্চ। ওই শিবির থেকে ৪০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এ, বি, ও এবং এবি নেগেটিভ ও পজিটিভ গ্রুপ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রতিদিন প্রায় ৪০ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করা হয়। মাসে গড়ে ৯০০ এবং বছরে ১০ হাজার ইউনিট রক্তের সরবরাহ হয়। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া, দুর্ঘটনা সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রতিদিন ১০ ইউনিট রক্ত মজুত রাখতে হয়। কিন্তু সোমবার ব্লাডব্যাঙ্কে ও-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত এক ইউনিট এবং এবি-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত দুই ইউনিট ছাড়া বাকি কোনও গ্রুপের রক্ত ছিল না। এক সপ্তাহ ধরে ব্লাডব্যাঙ্কে কয়েকটি গ্রুপের রক্ত ৫ ইউনিটের বেশি মজুত থাকছে না। সোমবার ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত আনতে যান চাকুলিয়ার বাসিন্দা পোচকা ঝা। তিনি বলেন, “দাদু পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকরা দুই ইউনিট ও-পজিটিভ রক্ত দিতে বলেছেন। ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত নেই। দুই আত্মীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দেন। এখন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।” |