দক্ষিণ দিনাজপুরে এইডস রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। সরকারি হিসাবে পাঁচ বছর আগে ওই জেলায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ জন। ২০১৩ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭০ জন। সরকারিভাবে ওই তথ্য উঠে আসার পাশাপাশি রোগীদের বেশিরভাগ বদনামের ভয়ে লুকিয়ে থাকায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্যকর্তারা প্রতি বছর বিশ্ব এইডস দিবসে নিয়মমাফিক পদযাত্রা ও আলোচনা চক্র করে দায় সারছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বছর ভিত্তিক এইডস রোগীর পরিসংখ্যানও নেই বলে অভিযোগ।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মন্ডল সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “জেলা থেকে শ্রমিকের কাজে প্রচুর যুবকযুবতী ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। তাঁদের অনেকে বেপরোয়া জীবনযাপনের ফলে শরীরে এইচআইভির ভাইরাস বাসা বাঁধছে। ফিরে আসার পরে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের একত্রিত করে জেলায় গড়ে ওঠে ‘দক্ষিণ দিনাজপুর সোসাইটি অফ পিপলস লিভিং ইউথ এইচআইভি এডস’ নামে একটি সংগঠন। ওই বছর মোট ১১ জনকে নিয়ে কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া এবং খাবারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে নামে। পরবর্তীতে সরকারি অনুদানের অভাবে সংস্থাটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বালুরঘাট হাসপাতালে ২৭৮ জন, গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ৬১ জন, হিলি গ্রামীণ হাসপাতালে ১২ জন এবং কুমারগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৯ জনের রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ মিলেছে। সরকারি হিসেবে জেলায় এইডসে আক্রান্ত ওই ৩৭০ জন রোগী ধরা হচ্ছে।
যদিও দক্ষিণ দিনাজপুর সোসাইটি অফ পিপলস লিভিং ইউথ এইচআইভি এইডস সংস্থার সম্পাদক সোবাহান মন্ডল বলেন, “সরকারি হিসেবের দ্বিগুণ রোগী আত্মগোপন করে আছে। বদনামের ভয়ে অনেক রোগী প্রকাশ্যে আসতে চান না।” তিনি জানান, গরিব শ্রেণির রোগীদের মূলত সংস্থার অধীনে আনা সম্ভব হয়েছে। উচ্চবিত্তরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খায়। সংস্থার সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, লুকিয়ে থাকা রোগীরা সমাজে রোগ ছড়াচ্ছেন। অনেকে রোগ গোপন করে বিয়ে করছে। তেমন অনেকে একের পর এক সুস্থ মানুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়ে রোগ ছড়াচ্ছে। জেলায় যৌনপল্লি নেই। ভ্রাম্যমান যৌন কর্মীরা লুকিয়ে দেহ ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ। তার উপরে রয়েছে হিলি সীমান্তে বর্হিবাণিজ্যের জন্য ভিন রাজ্যের ট্রাক লরি চালকদের যাতায়াত। প্রায় প্রতিদিন ওপার থেকে ঘটছে অবৈধ অনুপ্রবেশ। লুকিয়ে থাকা এমন আক্রান্ত মানুষদের আলোয় নিয়ে আসার কাজে নেমেছে সংস্থাটি। সংস্থার সম্পাদকের কথায়, “রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সামাজিক বয়কটের ভয়ে অনেক রোগী রোগ গোপন করছে। অনিয়ম করার ফলে অবস্থা খারাপ হওয়ার পরে অনেকে আমাদের সংস্থায় যুক্ত হচ্ছেন।” |