আবারও সামনে এল জুনিয়র ডাক্তারদের দল বেঁধে সৈকত সফরে যাওয়ার জেরে হাসপাতালে পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার ছবি। এনআরএসের পর এ বার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে সব মিলিয়ে জুনিয়র ডাক্তার রয়েছেন ১৬০ জন। এর মধ্যে ৮০ জনই রবিবার সন্ধ্যায় ছুটি কাটাতে গিয়েছেন মন্দারমণিতে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মতোই বাস বোঝাই করে এঁরা পৌঁছেছেন সৈকতে। সোমবার রাতে তাঁদের মেদিনীপুরে ফেরার কথা। ফলে, সোমবার সকালে হাসপাতালে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন বহু রোগী। এ দিন সাতসকালেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে পৌঁছে গিয়েছিলেন চন্দ্রকোনা টাউনের কাকলি সামন্ত। কিন্তু সাড়ে ন’টাতেও মেডিসিনের বহির্বিভাগের দরজা খোলেনি। সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। অবশেষে এক হাসপাতাল কর্মী এসে দরজা খোলেন। তারও প্রায় এক ঘন্টা পরে আসেন এক জুনিয়র ডাক্তার। শুরু হয় রোগী দেখা। কাকলিদেবী বলেন, “এত বড় হাসপাতালেও ডাক্তার নেই? মেদিনীপুরে এসেও এমন সমস্যায় পড়তে হবে ভাবিনি।” একই অভিজ্ঞতা নাড়াজোলের সোমনাথ দাসের। তাঁর কথায়, “কত রোগী সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ডাক্তার নেই। বহির্বিভাগও কত দেরিতে খোলা হল।” |
মেদিনীপুর মেডিক্যালে সিনিয়র ডাক্তারদের যথাসময়ে আসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তাররাই যাবতীয় দায়িত্ব সামলান। বিশেষ করে বহির্বিভাগের দায়িত্ব জুনিয়র ডাক্তারদের উপর রয়েছে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে একসঙ্গে ৮০ জন জুনিয়র ডাক্তার ছুটি নিলেন? প্রশ্ন শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন হাসপাতাল সুপার থেকে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সকলেই। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “ছুটি? জুনিয়র ডাক্তাররা ছুটি নিয়েছেন বলে আমার কাছে কোনও খবর নেই।” আর অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যালের ব্যাখ্যা, “জুনিয়র ডাক্তাররা এক-একটি ইউনিটের অধীনে কাজ করেন। তাঁরা যদি একসঙ্গে ছুটি নিতেন, তাহলে ইউনিটের প্রধানরা বিষয়টি আমাকে জানাতেন। এ ব্যাপারে আমাকে কেউই কিছু জানাননি।” জুনিয়র ডাক্তাররা অবশ্য জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই ছুটি নিয়েছেন তাঁরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, “কর্তৃপক্ষ যদি এমন কথা বলে থাকেন, তা ঠিক নয়। আমরা ওঁদের মৌখিক ভাবে জানিয়েই এসেছি। না হলে এ ভাবে একসঙ্গে বাসে করে আসা সম্ভব!”
এ দিন হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটেছে বলে অবশ্য মানতে চাননি মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যাল। তাঁর বক্তব্য, “আমি খোঁজ নিয়েই বলছি, কোথাও পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। সর্বত্র স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।” যদিও বাস্তব হল সোমবার হাসপাতালের সব বহির্বিভাগ তো সময় মতো খোলেইনি, তার উপর কয়েকটি বিভাগের সব ঘরও দিনভর খোলা হয়নি ডাক্তারের অভাবে। চন্দ্রকোনা রোড থেকে এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসেছিলেন শাহজাহান মল্লিক। সোমবার দুপুর ১১টা নাগাদ অর্থোপেডিক বহির্বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। সময় মতো ডাক্তার আসেন না। মেদিনীপুরের মতো এত বড় হাসপাতালে কি এটুকু আশা করাও অন্যায়?” |