জল আনতে ৩ কিমি হাঁটতে হচ্ছে কালিম্পঙের যুগেন লেপচাকে। বাড়ি কালিম্পঙের এগারো মাইল এলাকায়। বর্ষার সময় ঘরের কাছে পুরসভার স্ট্যান্ড পোস্টে জল পান। মার্চ পড়লেই সেই জল অনিয়মিত। কারণ, জলের উৎস ঝোরা শুকোতে শুরু করে।
কার্শিয়াঙের বারবং বস্তির সোনম দোরজি ভুটিয়া গরম পড়লে কাকভোরে উঠে পড়েন। তাঁর বাড়ি সদর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাঁদের এলাকায় বর্ষায় তবুও কিছুটা জল মেলে। গ্রীষ্মের সময়ে জল আনতে প্রায় ৬ কিলোমিটার উজিয়ে শহরে যেতে হয়। সেখানে লম্বা লাইন পড়ে। সে জন্যই ভোরে উঠে গিয়ে লাইন দিতে হয় তাঁদের। দার্জিলিঙের পানদামের বাসিন্দা সীমা থাপারও একই অভিযোগ। দার্জিলিং সদরের ওই এলাকায় পুরসভার পানীয় জল সরবরাহের জন্য নতুন পাইপ লাইন হলেও জল মিলছে না।
একঝলকে এই মুহূর্তে দার্জিলিং পাহাড়ের ৩ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার পানীয় জলের ছবি এমনই। ফি বছর গরম পড়লেই ওই সমস্যার মুখোমুখি পড়েন তাঁরা। এবারও অন্যথা হয়নি। ৩ মহকুমার ৪ পুরসভার চেয়ারম্যানরাও জলের সমস্যার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। পাহাড়ের তিন বিধায়কও সবই জানেন। কিন্তু, কেউই সমস্যার সমাধানে তেমন কোনও আশা বাসিন্দাদের দিতে পারছেন না। দার্জিলিঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা ততা বিধায়ক রোহিত শর্মা বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা তীব্র হচ্ছে। এটা মেটাতে হবে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাকা দেয়নি। এই মুহূর্তে আমরা বিধানসভায় যাচ্ছি না। তাই সরকারকেই উদ্যোগী হয়ে টাকা পাঠাতে হবে।” |
এক দশকের মধ্যে দার্জিলিঙের নতুন করে জলের উৎস তৈরি হয়নি। সেই পুরানো আমলে দার্জিলিঙের জলের মূল উৎস ছিল সিনচল বনাঞ্চলের দুটি হ্রদ। মূল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। সেখানে দুটি জলের হ্রদ রয়েছে। দুটিতে মোট ৩৩ মিলিয়ন গ্যালন জল ধরে। কিন্তু তাতে জল স্তর প্রতিদিন নেমে যাচ্ছে বলে অভিমত খোদ দার্জিলিঙের পুরপ্রধান অমর সিং রাইয়ের। ১৯ টি আলাদা পথ দিয়ে সেখান থেকে জলের পাইপ শহরে ঢুকছে। একই অবস্থা কলিম্পঙেরও।
এই মহকুমার গরুবাথান, লাভা বা লোলেগাঁওতে জলের সমস্যার জন্য পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। কার্শিয়াঙের অবস্থা আরও সঙ্গীন। সেখানকার পুরো জলটাই আসে প্রাকৃতিক উৎস থেকে। ফলে উৎসে টান পড়লে জল পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া বেআইনি ‘ট্যাপিং’ বা রাস্তার মাঝখান থেকে জল চুরি করার ফলেও জলের গতি কমে যায়। দার্জলিহের জেলা শাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “রাস্তা ও জলের কাজের জন্য ৫৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।” এদিকে বালাসন প্রকল্পের কাজও ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ। তাই কবে জলের সমস্যার সমাধান হবে তা পাহাড়বাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। |