নিরাপত্তার কারণেই ফাঁসির আসামি আফতাব আনসারিকে এক বছর ধরে জেলের বাইরে বার করার ঝুঁকি নেয়নি রাজ্যের কারা দফতর। সেই আফতাব এখন বারাণসীর জেলে যেতে চাইছে এবং এই মর্মে কারা দফতরের কাছে আবেদনও জানিয়েছে। কারা দফতরের খবর, তার আবেদন উত্তরপ্রদেশের কারা দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের কারা দফতর সবুজ সঙ্কেত দিলে আফতাবকে বারাণসীর জেলেই পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও খবর। প্রশ্ন উঠেছে, আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানা এবং খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি আফতাবের আর্জি মেনে তাকে ভিন্ রাজ্যে পাঠানোর উদ্যোগ কেন? বিশেষত মুম্বই হামলার আসামি আজমল কসাব এবং সংসদে হামলার মূল চক্রী আফজল গুরুর ফাঁসির পরে যখন অন্যান্য ফাঁসির আসামি-সহ আফতাবেরও নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে?
সদুত্তর মিলছে না। কারা দফতর সূত্রে শুধু বলা হচ্ছে, আফতাব সম্প্রতি একটি আবেদনে জানিয়েছে, বারাণসীর কাছে তার আত্মীয়স্বজন থাকেন। আফতাবের সঙ্গে দেখা করার জন্য বারাণসী থেকে উজিয়ে তাঁদের আসতে হয় কলকাতায়। সে বারাণসীর জেলে থাকলে বাড়ির লোকেরা সহজেই তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আইজি (কারা) রণবীর কুমার সোমবার আফতাবের আবেদনের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “মানবিকতার খাতিরে আমরা তার আবেদন নাকচ করতে পারি না। তাই আমরা সেই আবেদন উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওদের আপত্তি না-থাকলে আমাদের আপত্তি নেই।”
কিন্তু নিরাপত্তার কারণেই তো আফতাবকে দীর্ঘদিন ধরে জেলের বাইরে আনা হচ্ছে না। গত বছরের গোড়ায় তাকে দিল্লির তিস হাজারি কোর্টে তোলা হয়েছিল রীতিমতো নিরাপত্তা-ব্যূহের ব্যবস্থা করে। সকালে তাকে আলিপুর জেল থেকে বার করে বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। আবার ফিরিয়ে আনা হয় সন্ধ্যার বিমানেই। তার পরে আর তাকে জেল থেকে বার করা হয়নি। সেলে থেকেই সে মোবাইলে করাচিতে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে জেনে তাকে জেল থেকে বার করার আর কোনও ঝুঁকি নেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র দফতর। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, নয়াদিল্লি ও বিহারের স্বরাষ্ট্রসচিবদের চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, অন্যান্য মামলায় হাজিরা দিতে আফতাবকে আর ওই সব রাজ্যে পাঠানো হবে না।
এমনকী নিরাপত্তার কারণেই আফতাবকে আদালতে তোলারও দরকার নেই বলে রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে জঙ্গি হানার ঠিক পরের দিন দুবাইয়ে গ্রেফতার হয় আফতাব। তার পর থেকে সে জেলেই রয়েছে। আলিপুর জেলের এক নম্বর সেলে তাকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। কিন্তু জেলে মোবাইল ব্যবহার, রক্ষীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে আফতাব এবং তার সঙ্গী জামিরুদ্দিন নাসিরের বিরুদ্ধে। গত অক্টোবরে জেলে বসে পাকিস্তানে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলারও অভিযোগ ওঠে আফতাবের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নিরাপত্তার কারণেই আলিপুর জেল থেকে সরিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাসিরকে। আলিপুর জেলে আফতাবের সেলে ভিডিও-সম্মেলনের ব্যবস্থা আছে। মামলা চলাকালীন প্রয়োজনে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে তার বক্তব্য জানা যেতে পারে। তাই তাকে হাজির করানোর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলে ওই চার রাজ্যকে জানিয়ে দেন বাসুদেববাবু।
তা হলে এখন আফতাবের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে উত্তরপ্রদেশে পাঠানো হবে কী ভাবে?
স্বরাষ্ট্র ও কারা দফতরের কর্তারা সরকারি ভাবে এই প্রশ্নের জবাব দেননি। তবে কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকারই আফতাবকে বারাণসীর সেন্ট্রাল জেলে নিতে চাইবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু আফতাব আবেদন জানালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা আটকে রাখতে পারে না। তাই উত্তরপ্রদেশের কোর্টেই বিষয়টি ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।”
আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “বারাণসী তো আর ভারতের বাইরে নয়। তাই সেখানে থাকলেও আমাদের কোনও অসুবিধে নেই।” |