|
|
|
|
হামলার শঙ্কা নেই, দাবি পুলিশের |
লালগড়ের চার সিপিএম নেতা এখন প্রহরিহীন |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
নিরাপত্তা নিয়ে ‘আমরা-ওরা’-র বিতর্ক আরও উস্কে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জঙ্গলমহল সফরের দিন, সোমবার খাস লালগড়ের চার সিপিএম নেতার নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য সরকার।
যে-চার জন নেতার সরকারি নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন লালগড় এলাকায় সিপিএমের একটি লোকাল কমিটির সম্পাদক। আবার ওই তালিকায় থাকা আর এক জন সিপিএম নেতা মাওবাদীদের গুলিতে জখম হয়ে মাসের পর মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনের বক্তব্য, ওই সব সিপিএম নেতার উপর হামলার আশঙ্কা এখন আর নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের প্রধান যুক্তি, সিপিএম এখন আর শাসকদল নয় বলে পার্টির নেতা-কর্মীরাও মাওবাদীদের তেমন ‘টার্গেট’ নন। তবে সিপিএমের দাবি, সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে লালগড়ের মতো স্পশর্কাতর জায়গায় নিরাপত্তারক্ষী তুলে নিয়ে পার্টির ওই নেতাদের আরও সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক ও বিনপুর-১ জোনাল কমিটির সদস্য বিনয় পাণ্ডে, বিনপুর-১ জোনাল কমিটি ও লালগড় লোকাল কমিটির সদস্য তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈতা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির সদস্য সুমন সিংহ এবং পার্টির ধরমপুর লোকাল কমিটির সদস্য সুব্রত মাহাতো। তরুণবাবুর দু’জন আর বাকিদের সকলের এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী ছিল। ২০১১ সালের মার্চ মাসে তাঁদের সরকারি নিরাপত্তা দেওয়া শুরু হয়। এ দিন একটি নির্দেশে পাঁচ জন নিরাপত্তারক্ষীর সবাইকে লালগড়ের তল্পিতল্পা গুটিয়ে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ বিনপুরে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে তাঁর বক্তৃতাও দেওয়ার কথা।
পুলিশ জানায়, লালগড়ের এসআই চকের বাসিন্দা, সিপিএম নেতা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০১০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়ির সামনে গুলি করে মাওবাদীরা। এখনও পর্যন্ত তাঁর শরীরে চার বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সে বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে তরুণবাবুর নিরাপত্তারক্ষী আরও এক জন বাড়িয়ে দেয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে বামাল গ্রামে সুব্রত মাহাতোর বাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র মাওবাদীরা। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী পৌঁছায় এবং দু’পক্ষের তুমুল গুলির লড়াই হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী সোমবার বলেন, “কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর উপরে মাওবাদী হামলার আশঙ্কা কতটা ও কী রকম, সেটা আমরা বিভিন্ন সময় অন্তর পর্যালোচনা করে দেখি। মূলত গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতেই এটা করা হয়। সর্বশেষ গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী, লালগড়ের ওই চার সিপিএম নেতার উপর মাওবাদী হামলার আশঙ্কা নেই। তাই, তাঁদের সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।”
জেলার এক পুলিশকর্তার কথায়, “এমনিতেই পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দৈনন্দিন কাজ চালাতে আমাদের সমস্যা হয়। তাই, গোয়েন্দা-রিপোর্ট অনুযায়ী কোনও নেতার উপর জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আর না-থাকলে তাঁর নিরাপত্তায় রক্ষী না-রেখে অবিলম্বে স্বাভাবিক পুলিশি কাজে ফেরানো উচিত।”
গত বছরের শেষ দিক থেকেই জঙ্গলমহলে সিপিএমের বিভিন্ন নেতার নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার কিংবা কমানোর কাজ শুরু হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকারের বক্তব্য, “তৃণমূল সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য লালগড়ের ওই সিপিএম কর্মীদের আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে তাঁদের নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তৃণমূলের উদ্দেশ্যই হল, আমরা যাতে বিপন্ন হই, সেটা নিশ্চিত করা। আমাদের তো এই মুহূর্তে প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।” দীপকবাবু কিংবা পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের অন্যতম ডহরেশ্বর সেনদের নিরাপত্তারক্ষী অবশ্য এখনও রয়েছে।
সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক বিনয় পাণ্ডে বলেন, “তৃণমূল সরকার তো নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা-ওরা-র রাজনীতি করছে।”
সিপিএম নেতা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছত্রধর মাহাতোর অ্যারেস্ট মেমো-তে সাক্ষী হিসেবে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। আমাদের পার্টি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক রং না-দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাওবাদী দমনে প্রশাসনকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে গিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি, সরকার আমাকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিল!” রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা বলেন, “আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। তাই, কোনও মন্তব্য করব না।” |
|
|
|
|
|