|
|
|
|
আশঙ্কা ভোগান্তির |
উচ্চ মাধ্যমিকের দিনেই বিনপুরে সভা মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম |
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে আজ, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরে প্রশাসনিক জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই ভোগান্তির আশঙ্কায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
আশঙ্কা মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে। প্রথমত, পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথে যথেষ্ট যানবাহন। দ্বিতীয়ত, সভাস্থলে মাইকের শব্দসীমা। প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, আইন বাঁচিয়ে, কাউকে সমস্যায় না ফেলে সভার আয়োজন করা হবে। কিন্তু পরীক্ষার মধ্যে কেন সভা, সে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কটাক্ষ, “প্রায় প্রতি মাসেই মুখ্যমন্ত্রী এখানে আসছেন। তবে ওঁর আসার জন্য পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হওয়াটা কাম্য নয়। এ নিয়ে অবশ্য কিছু বলার নেই। কারণ উনি যা করবেন সেটাই গণতন্ত্র, আর কেউ কিছু বললে সেটা ষড়যন্ত্র।” |
|
লাগানো হচ্ছে সাউন্ড বক্স। বিনপুরে। |
মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে রাত কাটাবেন তিনি। আজ, বুধবার বিনপুরের সভা থেকে দুই মেদিনীপুরের নানা প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করার কথা তাঁর। সভার সময় বেলা ১২টা। আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায়। আজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা রয়েছে। দুপুর সওয়া একটায় উচ্চ মাধ্যমিক শেষের পর দু’টো থেকে ওই তিনটি বিষয়ে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মনে করা হচ্ছে, পরীক্ষার্থীরা সব থেকে নাকাল হবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, জেলায় দিনে ৮০০ বাস চলে। তার মধ্যে অন্তত ২০০টি বাস সভার জন্য নেওয়া হবে। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি অবশ্য বলেন, “এ বার বাস কম, লরি বেশি নেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুর সদর থেকে মাত্র ২০টি বাস চাওয়া হয়েছে।” যদিও বাস মালিকরা জানান, তৃণমূল নেতারা ইতিমধ্যেই বাস চেয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসনও বাস চেয়েছে। এই অবস্থায় ঝাড়গ্রাম মহকুমা বাস মালিক সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক প্রশান্ত দাসের স্বীকারোক্তি, “বাস্তবে কতগুলি বাস চলবে তা বলা যাচ্ছে না।”
পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরাও চিন্তিত। সভাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র আশিস সিংহের। তার কথায়, “দশ কিলোমিটার দূরে হাড়দায় আমার বাড়ি। বাস না পেলে সমস্যায় পড়তে হবে।” আর এক পরীক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীর পিয়ালি পালও চার কিলোমিটার দূরের আউলিয়া গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসে। পিয়ালি বলে, “বাস না পেলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।” |
|
মঙ্গলবার রাতেই ঝাড়গ্রাম পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ে একটা বৈঠক
করেন রাতে। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। |
চিন্তা রয়ে গিয়েছে সভাস্থলের শব্দসীমা নিয়েও। পরিবেশ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি তো নয়ই, এমনকী লোকালয়েও মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার কথা জেলাশাসকের। বিনপুরে ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের ধারে যে ধানজমিতে মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন, তা পুরোদস্তুর লোকালয়। সভাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্রও রয়েছে। তাহলে কী ভাবে সেখানে এত বড় মাপের সভা হবে? জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আইন বাঁচাতে সভাস্থল ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর মাইকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে বক্স। এ দিন বিকেল পর্যন্ত যদিও সভাস্থল ঘেরার কোনও তোড়জোড় দেখা যায়নি। সভাস্থলে হাজির পূর্ত-বৈদ্যুতিক বিভাগের এক কর্মী জানালেন, ৬০টি ছোট বক্স ও ১৪টি বড় বক্স লাগানো হয়েছে। তবে শব্দসীমা যাতে ৬৫ ডেসিবেলের বেশি যাতে না হয় সে জন্য বসানো হচ্ছে শব্দ পরিমাপক যন্ত্র।
সভাস্থলের নিকটবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্র বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীতিকুমার আখুলি অবশ্য এই সংক্রান্ত বিতর্কে যেতে নারাজ। তিনি বলেন, “যেখানে সভা হচ্ছে, সেখান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে শব্দ আসার সম্ভাবনা নেই।” যদিও পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রায় সকলে একমত, যদি উচ্চ মাধ্যমিকের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে থাকে, তবে ছুটির দিনে করলেই ভাল হত।
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
|
|
|