দুই বিদেশির দুই ছবি।
এক জন সাফল্যের সপ্তম স্বর্গে। অপর জনকে ঘিরে ব্যর্থতা-বিতর্কের ধোঁয়াশা।
পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমে এক জন গোল করে রাতারাতি নয়নের মণি ইস্টবেঙ্গল জনতার। আর অপর জন কিস্তিমাতের বদলে ড্রেসিংরুমে বিতর্ক বাড়িয়ে খবরের শিরোনামে।
প্রথম জন ইস্টবেঙ্গলের অ্যান্ড্রু বরিসিচ। ডার্বি ম্যাচের পরের দিনটা যিনি লুকোচুরি খেললেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। গোটা দিন কাটিয়ে দিলেন সল্টলেকের পাঁচতারা হোটেল এবং দক্ষিণ কলকাতার ঝাঁ-চকচকে শপিং মলে ঘুরে।
আর দ্বিতীয় জন মোহনবাগানের টোলগে ওজবে সোমবার সারা দিন বিচ্ছিন্ন রইলেন বহির্জগৎ থেকে। দিনের একটা বড় সময় বন্ধ তাঁর সেলফোন। ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে কোচের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে ড্রেসিংরুমে জলের বোতল এবং চেয়ারে লাথি মেরে সংযত থাকার ‘হলুদ কার্ড’ দেখলেন কর্তাদের কাছে।
এ দিন ময়দান তোলপাড় দুই গুঞ্জনে।
এক) বড় ম্যাচের রাতেই অভিনব আড্ডায় বসেছিলেন তিন প্রধানের তিন অস্ট্রেলীয় ফুটবলার। মোহনবাগানের টোলগে, ইস্টবেঙ্গলের বরিসিচ এবং প্রয়াগ ইউনাইটেডের ভিনসেন্ট। সেখানেই নাকি বরিসিচকে শুভেচ্ছা জানান তাঁর দুই দেশোয়ালি ফুটবলার।
দুই) আড্ডাতে হাজির ছিলেন খোদ ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। তবে এই দুই গুঞ্জনেরই সত্যতা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। উলটে ভিনসেন্ট বলছেন, “মাঠেই প্রথম অ্যান্ড্রুকে দেখলাম। দুরন্ত গোল করেছে সেমিফাইনালে। আমরা সতর্ক থাকব। তবে এই সব আড্ডার খবর মিডিয়ার মনগড়া।”
|
বরিসিচ। নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
আর যার গোলের জন্য গত দু’দিনে অনেক ফুটবলপ্রেমী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের হেঁসেলে ইলিশের আনাগোনা সেই অ্যান্ড্রু বরিসিচ এখন কলকাতার ফুটবল জনতার আবেগ বুঝলেও ‘ইস্টবেঙ্গলের লাকি ফিশ’ ইলিশের স্বাদ কেমন তা জানতে মরিয়া। শিল্ড ফাইনালের পরের দিনই শহরে আসছেন তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন মারে হকিন্স। আনন্দবাজারেও সেই তথ্য আছে শোনার পর হাসতে হাসতে হাসতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের নয়া ‘হার্টথ্রব’ বললেন, “ইলিশ নিয়ে অনেক কথা শুনলাম। তবে খাইনি কখনও। স্ত্রী আসুক। তারপর ক্লাবের সতীর্থ-বন্ধুদের সঙ্গে চেখে দেখতে হবে।”
বরিসিচ যখন ইলিশ চেখে দেখার বাসনা ব্যক্ত করছেন তখন তাঁর কোচ মর্গ্যান কিন্তু মুখে তালা-চাবি লাগিয়ে দিয়েছেন ফুটবলারদের। কড়া ফতোয়া, ডার্বি জিতে ফাইনালের আগে মনসংযোগ যেন নষ্ট না হয়। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, “ডার্বি অতীত। এ বার ফাইনাল। তবে আজ ফুটবল নিয়ে কোনও কথা নয়। মঙ্গলবার অনুশীলন থেকেই ভাবা শুরু করব।”
ইস্টবেঙ্গলে যখন বড় ম্যাচ জিতে আনন্দের আবহ মোহনবাগানকে তখন তাড়া করছে টোলগেকে নিয়ে চাড়িয়ে ওঠা নতুন বিতর্ক। ইস্টবেঙ্গলের কাছে টাইব্রেকারে হারের ধাক্কায় মুষড়ে পড়েছেন ওডাফা-সাবিথরা। তবে ওডাফার পেনাল্টি নষ্ট করা প্রসঙ্গে গোটা দল অধিনায়কের পাশেই। কোচের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ায় বাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে শো-কজ করা হবে বলে এ দিন ময়দানে গুঞ্জন থাকলেও, রাতে অর্থসচিবকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, “টোলগেকে শো-কজ করা হচ্ছে বলে কোনও খবর আমার জানা নেই।” তবে ক্লাব সূত্রে খবর, এ দিন বাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফা এবং টোলগেদু’জনের সঙ্গেই আলাদা আলাদা ভাবে বসেছিলেন সবুজ-মেরুনের শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই দু’জনকে সংযত থাকতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে টোলগের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও করিম বলছেন, “ওটা ড্রেসিংরুমের ব্যাপার। তা বাইরে আলোচনা হোক চাইছি না।”
তবে মোহনবাগান কোচ আশাবাদী, আই লিগে সাপ্রিসা, পুণের সঙ্গে খেলায় দলের বুনোট ভাবটা ফিরে এসেছে। ফিরেছে আত্মবিশ্বাস। আই লিগে অবনমন বাঁচাতে যা কাজে লাগবে। |