প্রায় দু’দশক আগে গঠিত হলেও আজও খেলার মাঠ সহ একাধিক সমস্যার সুরাহা করতে পারেনি শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ। তাতে মহকুমা তথা উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বাঁধছে। কারণ, অতীতে উত্তরবঙ্গের অলিখিত প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শিলিগুড়িতে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছে। একাধিক জাতীয় স্তরের খেলা হয়েছে। ইদানীং মাঠের সমস্যার কারণে অনেক বড় দলই শিলিগুড়িতে খেলতে সহজে রাজি হচ্ছে না।
এমনকী, গত মরসুমে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল সুপার ডিভিশন ক্রিকেট। চলতি বছরেও বারবার জাতীয় ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন খেলার জন্য বিলম্বিত হয়েছে স্থানীয় খেলা। তার ফলে স্থানীয় ক্লাব লিগের খেলা শেষ করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কাছে। সমস্যার বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ সহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও। তাই সোমবার ওই সব সমস্যার প্রসঙ্গ ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম কমিটির বৈঠকে। কমিটির সভাপতি তথা শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রচনা ভগতের কাছে মাঠটি ফুটবলের উপযোগী করে রাখার প্রস্তাব দেন অরূপরতন বাবু। ফুটবলের মাঠের মাঝখান থেকে ক্রিকেট খেলার পিচ উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় ক্রীড়া পরিষদ। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে সভাপতির কাছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন সব কটি বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার।
স্টেডিয়াম কমিটির সভাপতি রচনা ভগত জানিয়েছেন, “সভাপতি হিসেবে এটা আমার প্রথম বৈঠক। তাই সব কিছু জেনে বুঝে নিতে একটু সময় লাগবে। তবে আমি সমস্ত সমস্যার কথা শুনেছি। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি”। তিনি বৈঠকের পর সরেজমিনে ঘুরে দেখেন পুরো স্টেডিয়াম চত্বর। খোঁজ নেন স্টডিয়াম চত্বরে থাকা বিভিন্ন সংগঠন ও বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানেরও। সেগুলি কি অবস্থায় রয়েছে, কার সঙ্গে কি চুক্তি কিংবা চুক্তি নবিকরণ করার প্রয়োজন কি না তাও পরীক্ষা করেন তিনি।
বস্তুত, ক্রীড়া পরিষদের কর্তারা সকলেই মানেন, শিলিগুড়ির খেলার প্রধান অন্তরায় ভাল খেলার মাঠ। শিলিগুড়ি মহকুমার মাত্র চারটি মাঠ খেলার উপযুক্ত। কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন, চাঁদমণি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, সূর্যনগর মিউনিসিপ্যাল গ্রাউন্ড এবং তরাই স্কুল মাঠ। তার মধ্যেই ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও অ্যাথলেটিক্স খেলা হয়। ফুটবল খেলার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন এবং সূর্যনগর মিউনিসিপ্যাল গ্রাউন্ড বরাদ্দ। আর চাঁদমণি ক্রিকেট গ্রাউন্ড এবং তরাই স্কুল মাঠ ক্রিকেট খেলার জন্য বরাদ্দ রয়েছে.। এই মাঠগুলিতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রধান দু’টি খেলা হয়। অন্যান্য খেলাগুলিকে এই দু’টি খেলার ফাঁকে খেলিয়ে দেওয়া হয়। তাও এগুলির একটাও ক্রীড়া পরিষদের নিজস্ব মাঠ নয়। ফলে সারা বছর রক্ষণাবেক্ষণ যেমন সম্ভব হয় না। তেমনই, মাঠগুলি ইচ্ছে মত পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। ফলে খেলাধূলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান অরূপরতনবাবু।
আরও একটা প্রধান সমস্যা আর্থিক সমস্যা। ফেডারেশন কাপ, আই লিগ, বা সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক সিসিএলের মত টুর্নামেন্টের আয়োজন করে কিছু অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায়। তা ছাড়া আইএফএ বা সিএবি যা অর্থ দেয়, তা দিয়ে তাদের সারা বছর চালাতে হয়। তবে অন্যান্য জেলার মত প্রচুর টুর্নামেন্ট করা যায় না মাঠ ও অর্থের অভাবে। অরূপরতনবাবু বললেন, “আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাব, রেফারিজ অ্যান্ড আম্পায়ার অ্যাসোসিয়েশন-সহ সকলেই সহযোগিতা করেন বলে আমরা খেলা চালাতে পারি অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও”। তবে সমস্যা বেশি ক্রিকেট নিয়ে। যেমন তেমন মাঠে ক্রিকেট খেলা যায় না। তার অনেক রকম চাহিদা রয়েছে। তা পূর্ণ করে খেলা চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যপার। এর মধ্যে উত্তরায়ণের চাঁদমণি মাঠের মালিকানা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই তা রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব নিতে পারছে না ক্রীড়া পরিষদ। এমতাবস্থায়, আগামী বছর পুজোর পর থেকেই ক্রিকেট মরশুম পুরোদমে কী ভাবে শুরু করা যাবে তা নিয়েই ভাবছেন পরিষদের কর্তারা। |