আগেই মনে হয়েছিল, মোহালি টেস্টের শেষ দিকটা প্রচণ্ড উত্তেজক হবে। সেটাই হল। ভারতের সামনে যে টার্গেট ছিল, সেটা পরিস্থিতির বিচারে ভদ্রস্থ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া হৃদয় দিয়ে বল করে ভারতের কাজ কঠিন করে দিয়েছিল। যা-ই হোক, স্কোরলাইনে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। মাইকেল ক্লার্করা সিরিজে এখন ০-৩ পিছিয়ে।
তবু মোহালি থেকে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কিছুই পড়ে রইল না এমন নয়। ওরা ইনিংসে চারশো পেরিয়েছে। চতুর্থ দিন দুর্দান্ত বল করে ভারতের লিড একশোর কমে আটকে রেখেছে। সমস্যা হল, যে সেশনটা অস্ট্রেলিয়া হারছে, সেটা হারছে খুব বাজে ভাবে। তৃতীয় টেস্টে কী হতে যাচ্ছে সেটা শিখর ধবন আর মুরলী বিজয়ের ২৮৯ রানের পার্টনারশিপেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়টায় অস্ট্রেলিয়ার উপর চরম কর্তৃত্ব করেছে ওরা। এত তাড়াতাড়ি রান তুলেছে, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। অস্ট্রেলিয়া যখন ফেরার যুদ্ধ শুরু করল, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সোমবারও প্রথম সেশনেই অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট চলে গেল। ড্যামেজ কন্ট্রোলের কাজটা শিখতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ক্লার্করা তিনটে টেস্টের প্রত্যেকটা কিন্তু হারল কয়েকটা সেশনে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে। |
ভারতের জন্য আবার প্রচুর ভাল খবর। এক জন বা দু’জন ওদের জেতাচ্ছে না। গোটা টিম দুর্ধর্ষ খেলছে। ধবন দুর্দান্ত খেলেছে যেমন, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রবিবার মোক্ষম সময়ে ভুবনেশ্বর কুমারের তিনটে উইকেট। মোহালি টেস্টে ভারতের জয়ের মঞ্চটা ওখানেই তৈরি হয়ে গেল। সঙ্গে আছে বিজয়ের সেঞ্চুরি আর তিন ভারতীয় স্পিনার। টিমের সবাই যখন কিছু না কিছু করে, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ স্বাভাবিক ভাবেই সুখী দেখায়। ধোনির তাই সন্তুষ্ট হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকছে।
শুধু জয়ের স্ট্রোক নেওয়ার জন্য নয়। ভারত অধিনায়কের গর্ব করার কারণ অনেক। এই উইকেটে কিপিং করা সহজ ছিল না। ধোনি সেটা করল অবলীলায়। বোলিং পরিবর্তনের সময় ধুরন্ধর দেখিয়েছে ওকে। আর জয়ের রান তাড়া করার সময় মাথাটা ঠান্ডা রাখল। ওভার কমে আসছে জেনেও।
কিন্তু এগুলোও নয়। প্রথম টেস্টে ওর ইনিংসটাই সিরিজের মেজাজটা তৈরি করে দিয়েছিল। চেন্নাইয়ে যখন ধোনি ব্যাট করতে আসে, ম্যাচ তখনও যে কোনও দিকে যেতে পারত। ওই পরিস্থিতিতে একটা উইকেট পাওয়া মানে জয়ের দিকে অস্ট্রেলিয়ার ঝুঁকে পড়া। কিন্তু ধোনির বিধ্বংসী ইনিংস গোটা টিমকে তাতিয়ে দিল। চেন্নাই তো বটেই, পরের টেস্টগুলোতেও কর্তৃত্ব করল ভারত।
ক্লার্কের এখন কী করা উচিত? প্রথমত, পিঠের চোট ওকে আবার ভোগাতে শুরু করেছে। যার মানে, দিল্লিতে ওর নামা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি। আর ক্লার্ক যদি না খেলতে পারে, তা হলে অবাক করা একটা ব্যাপার আমরা দেখতে চলেছি। সেক্ষেত্রে এক টেস্টের নির্বাসন থেকে ফিরেই দেশকে নেতৃত্ব দেবে শেন ওয়াটসন!
|
অসি-যুদ্ধের ইতিকথা |
• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে এই প্রথম টেস্ট জয়ের হ্যাটট্রিক।
• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের হ্যাটট্রিক। ২০০৮-২০০৯, ২০১০-২০১১, ২০১২-১৩।
• ভারতের মাটিতে ২০০৮ নাগপুর থেকে টানা ছ’টা টেস্টে হার অস্ট্রেলিয়ার। দু’দলের মধ্যে শেষ ১০ টেস্টে ভারতের অষ্টম জয়।
• টেস্টে স্পিনারদের মধ্যে মাইকেল ক্লার্ককে সবথেকে বেশি আউট করেছেন অনিল কুম্বলে। ৬ বার। দু’নম্বরে রবীন্দ্র জাডেজা। ৫ বার। |
|