উপকূল বাঁচাতে উদ্ভিদ, লড়ছেন তিন গবেষক
মুদ্র উপকূলের ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে একটি বিশেষ উদ্ভিদের। বৈজ্ঞানিক নাম আইপোমিয়া পেস ক্যাপরি। ইংরাজিতে মর্নিং গ্লোরি বা বাংলায় ছাগল খুরি নামেই একে আমরা চিনি। সমুদ্র উপকূলের লতানো এই গাছ নিয়ে বিশেষ গবেষণা করছেন দুই শিক্ষক ও এক ছাত্র। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অমলকুমার মণ্ডল, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রধান সংযুক্তা মণ্ডল (পাঁড়ুই) এবং গবেষক ছাত্র তমাল চক্রবর্তীর মতে, ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রজাতির উদ্ভিদ। পরিণামে বাড়ছে সমুদ্র উপকূলে ক্ষয়ের আশঙ্কা।
এই তিন জনের প্রাথমিক গবেষণা অনুযায়ী, সমুদ্র উপকূলে বেশ কয়েক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। তারা সমুদ্রের বালি কামড়ে থাকে। ফলে ক্ষয় রোধে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে স্পিনফেক্স (ঘাস জাতীয়), প্যান্ডানাস অ্যাকানথাস (ছোট ঝোপ জাতীয়), মর্নিং গ্লোরি (লতা জাতীয়) প্রভৃতি। এর মধ্যে ক্ষয় রোধে সব থেকে বেশি ভূমিকা রয়েছে মর্নিং গ্লোরির। এই গাছের ফুলও খুব সুন্দর। লতানো গাছটির শেকড় জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে মাটির গভীরে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় সহজে এই এলাকায় ক্ষয় হয় না। গাছটির ‘নেকটারি গ্ল্যান্ড’ থেকে এক ধরনের রস নিসৃত হয়। যাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। কীটপতঙ্গ বা গরু-ছাগলের হাত থেকে বাঁচতেই এই ব্যবস্থা। বীজকে বাঁচানোর জন্যও অভিযোজন করে গাছটি।
অজান্তেই মর্নিং গ্লোরিকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। উদয়পুর থেকে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি হয়ে যে ৭৪৬ কিলোমিটার উপকূল রয়েছে, সেখানে একসময় মর্নিং গ্লোরিই শোভা বৃদ্ধি করত, এখন আর তার দেখা মেলা ভার। এ রাজ্যে সরকারি ভাবেও এই গাছ বাঁচানোর উদ্যোগ নেই। অথচ ওড়িশায় এমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিপন্ন মর্নিং গ্লোরিকে নিয়েই ‘কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর)-এর ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ জিও-মেরিন সায়েন্সেস’-এ ওই তিন গবেষকের প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে। গবেষক অমলবাবু বলেন, “মর্নিং গ্লোরি সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও অন্য কোন উদ্ভিদ কী ভাবে ক্ষয় রোধ করে, তাদের বাঁচাতে কোন পথে চলতে হবে সে সব নিয়ে গবেষণার জন্য ইউজিসি অর্থ দিয়েছে। গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে।” অমলবাবুর কথায়, “প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরেই মনে হয়েছে, যদি অবিলম্বে সরকার পদক্ষেপ না করে, তাহলে মর্নিং গ্লোরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ক্ষয় বাড়তে-বাড়তে সমুদ্র আরও এগিয়ে আসবে। হোটেল হোক, পর্যটকেরাও যান, কিন্তু পরিবেশকে তো বাঁচাতে হবে। ওড়িশা যদি পারে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন হবে না।” সেই লক্ষ্যেই লড়ছেন এই তিন গবেষক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.