শিলিগুড়ির ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ পেয়ে দার্জিলিঙের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারককে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আজ, মঙ্গলবার ওই এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি। সেখানে থাকার কথা পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত দত্ত। প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাসে ঢোকার পথে দীর্ঘদিন ধরে জঞ্জাল ফেলছে পুরসভা। এক সময়ে সেখানে তেমন জনবসতি ছিল না। শহর বাড়তেই সেখানে বেশ কয়েকটি স্কুল, বহুতল হয়েছে। লাগোয়া পাড়ায় বেড়েছে জনবসতি। তাই ডাম্পিং গ্রাউন্ড রাজগঞ্জের পুঁটিমারিতে সরানোর পরিকল্পনা করে পুরসভা। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। ফলে, দূষণে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা সচেতনতা জাগরণ কমিটি গড়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। |
শিলিগুড়ির ডাম্পিং গ্রাউন্ড। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই কমিটির সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “বহুদিন ধরে চরম দূষণের শিকার আমরা। নানা রোগ ছড়াচ্ছে আমাদের এলাকায়। বহুবার পুরসভা, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। এবার কলকাতা হাইকোর্টের পদক্ষেপে আশায় বুক বাঁধছি।” শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রেী দত্তও ডাম্পিং গ্রাউন্ড জনিত সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা জঞ্জালের বিকল্প ব্যবহার করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি। জৈব সার তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়!’’ শিলিগুড়ি পুরসভার কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান জানান, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের তরফে চিঠি পেয়েছেন। তিনি বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মতো মঙ্গলবার পরিদর্শনের সময়ে আমরাও সেখানে উপস্থিত থাকব।”
পুরসভা সূত্রে খবর, বর্তমানে প্রতিদিন শহরের প্রায় ২৫০-৩০০ মেট্রিক টন আর্বজনা সংগ্রহ হয়। এই আবর্জনা স্তূপাকারে জমা করা হয় শহরের উপকণ্ঠের প্রায় ৮৪ বিঘা জমির ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। যেখানে ১৯৫২ সাল থেকে শহরের ময়লা ফেলতে অভ্যস্ত পুরসভা। গত তিন দশকে শিলিগুড়ি শহরে জনসংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। ফলে শহরে তো বটেই, লাগোয়া ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় জনবসতি বেড়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকাও ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে। ফলে, সেখানকার বাসিন্দাদের তরফে দূষণের অভিযোগও বেড়েছে। কারণ, ওই আস্তাকুঁড় থেকে দিনভর নোংরা নিয়ে কাক-চিল ওড়াওড়ি করছে। কখনও তা লাগোয়া এলাকার স্কুল, বসতবাড়ির ছাদে ফেলছে। লাগোয়া কলোনির বাসিন্দা মীরা রাণী রায়, সুশান্ত বিশ্বাসরা বলেন, “উঠোন দিনভর নোংরা করে দিচ্ছে কাক-চিল। জোরে বাতাস বইলে ঘরের মধ্যেও জঞ্জাল ঢুকে পড়ে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। নানা রোগ হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগও বাড়ছে। এ সবই নেতা-কর্তারা জানেন।” তাঁদের অভিযোগ, গত আড়াই দশক বামেরা পুরবোর্ডে থেকে ‘দেখছি-দেখব’ বললেও কাজের কাজ হয়নি। সাড়ে তিন বছর আগে পুরবোর্ড কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে যায়। সেই সময়ে পুরবোর্ডের তরফে পৃথক ভাবে তৃণমূল নেতা গৌতম দেব, কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্ত বাসিন্দাদের আশ্বাস দেন, যত দ্রুত সম্ভব ডাম্পিং গ্রাউন্ড সমস্যার সমাধান করা হবে।
ঘটনা হল, কংগ্রেস-তৃণমূল পুরবোর্ড আভ্যন্তরীণ কোন্দলে এখন কিছুটা দিশেহারা। ফলে, কবে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে তা নিয়েই চিন্তিত ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। |