হাতি-ট্রেন সংঘাত রুখতে রেল মন্ত্রকের সঙ্গে ফের বৈঠক করলেন কেন্দ্র-রাজ্যের বনকর্তারা।
সোমবার রাজাভাতখাওয়ায় ওই বৈঠকে রেল কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তি-নিরাপত্তার প্রশ্নে এক গুচ্ছ প্রস্তাব তুলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে বনকর্তারা অবশ্য সন্দিহান। তাঁদের অনেকেই অকপটে জানান, বৈঠক হচ্ছে, প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে কিন্তু শুনছে কে?
এ দিন যেমন, শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার রেল পথে কম ট্রেন চালানো, ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ থেকে ওই রেলপথ ‘এলিভেটেড ট্র্যাক’ বা উড়াল রেল করার প্রস্তাব ফের তুলে দেওয়া হয় রেল কর্তাদের কাছে। তবে, রেলের পদস্থ কর্তারা জানান, ওই কাজ কতটা কার্যকর করা সম্ভব তা দিল্লিতে আলোচনার পরেই জানানো হবে। যা শুনে স্থানীয় এক প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের সদস্যের কটাক্ষ, “এই বৈঠকগুলি কার্যত দাঁড়িয়েছে বার্ষিক চায়ের আসরের মতো। সবাই সবার কথা শোনেন। কিন্তু তা আর কার্যকর হয় না। হাতি-মৃত্যুও চলতে থাকে।” |
কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী জানান, প্রস্তাব গুলি হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, “হয়তো রাতারাতি প্রস্তাবগুলি কার্যকর করা যাবে না। তবে যতটা সম্ভব করার চেষ্টা করা হবে।”
এ দিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের তিন সদস্য, বন দফতরের কর্তা এবং রেলের আধিকারিকদের ওই বৈঠকের পরে তিন সদস্যদের একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সীতাংশুবিকাশ মণ্ডল বলেন, “হাতি-ট্রেন সংঘাত রুখতে বৈঠকে যে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হয়েছে তা কী করে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে রেলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
বন দফতরের হিসেব, আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি, ১৬৮ কিমি রেলপথে গত তিন মাসে দমনপুর এলাকাতেই ছ-টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানী তথা হস্তি বিশেষজ্ঞ রামন কুমার বলেন, “ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যু রুখতে কিছু পরিল্পনা রয়েছে। দেখা যাক কতটা কার্যকর হয়।” বৈঠক শেষে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম বীরেন্দ্র কুমার জানান, ট্রেনের গতি ৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিছু ট্রেন ফালাকাটা দিয়ে চালানো যায় কিনা সে প্রস্তাব রেল বোর্ডে পাঠানো হবে।” কিন্তু তা কার্যকর হবে তো?
সময়ই তার উত্তর দেবে।
|
ট্রেন-হাতি সংঘাত রুখতে প্রস্তাব |
• ২৭ কিলোমিটার করিডরে এলিভেটেড ট্র্যাক।
• ডুয়ার্সের বদলে মালগাড়ি ও দ্রুতগামী ট্রেন ফালাকাটা দিয়ে চালানো।
• লাইনের দু’ধারে হাতির পছন্দের গাছ, ঘাস না রাখা।
• লাইনের দু’পাশে প্রায় ৩০০ মিটার জঙ্গল, ঝোপ পরিষ্কার রাখা।
• দমনপুর ও চাপড়ামারিতে নজরমিনার।
• ওই করিডরে খাবারের প্যাকেট, বর্জ্য না ফেলা।
• চালকদের হাতির গতিবিধি আগাম জানতে বিশেষ যন্ত্র। |
|